রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর কথায় বরখাস্ত হন টিটিই, বললেন এক যাত্রীর মা
যে তিন যাত্রীর বিরুদ্ধে বিনা টিকেটে রেল ভ্রমণের অভিযোগ উঠেছে, তাঁরা রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজনের দ্বিতীয় স্ত্রীর নিকটাত্মীয় বলে জানা গেছে। দাবি করা হচ্ছে, তাঁদের মধ্যে একজন রেলমন্ত্রীর দ্বিতীয় স্ত্রী অ্যাডভোকেট শাম্মী আক্তার মনির মামাতো বোন ইয়াসমিন আক্তার নিপার ছেলে ইমরুল কায়েস প্রান্ত এবং অপর দুজন তাঁর চাচাতো ভাই ওমর ও হাসান।
ইয়াসমিন আক্তার নিপার ভাষ্য অনুযায়ী, ট্রেনে ঘটে যাওয়া ঘটনার পর তাঁর ছেলে ইমরুল কায়েস তাঁকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানান। এরপর নিপা রেলমন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মী আক্তার মনিকে বিষয়টি জানান। পরে রেলওয়ের একজন কর্মকর্তাকে ফোন দিয়ে টিটিই শফিকুল ইসলামকে বরখাস্ত করতে বলেন মনি।
ইয়াসমিন আক্তার নিপা গতকাল শনিবার দুপুরে তাঁদের ঈশ্বরদীর নুরমহল্লা এলাকায় সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য দাবি করে জানান, এ ঘটনার পর রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন তাঁকে ফোন করে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চান। এরপর তিনি বিস্তারিত বলেন। নিপা আরও জানান, তাঁর ছেলে ইমরুল কায়েসকে শনিবার বিকেলে রেল ভবনে ডাকা হয়েছে। সেখানে গিয়ে এসব ব্যাপারে তাঁর বিস্তারিত বলার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছিলেন নিপা।
মনির মামাতো বোন ইয়াসমিন আক্তার নিপা আরও বলেন, ‘রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজনের স্ত্রী অ্যাডভোকেট শাম্মী আক্তার মনি আমার মামাতো বোন। এ ঘটনার পর আমি আমার মামাতো বোনকে (মন্ত্রীর স্ত্রী) ফোন করে টিটিই শফিকুল ইসলামের অসদাচরণের কথা জানাই এবং বদলি করে দিতে বলি। সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রীর স্ত্রী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ফোন করে ওই টিটিইকে বরখাস্তের জন্য বলেন। এরপরেই তাঁকে বরখাস্ত করা হয়।’
ইয়াসমিন আক্তার নিপা আরও বলেন, “আমার ছেলে ও তাঁর সহযোগীরা টিকেট কেটে ট্রেনে উঠেছিল। কিন্তু, ট্রেনের এসি রুমের সিট ফাঁকা থাকায় গার্ডের অনুরোধে তাঁরা এসি রুমে গিয়ে বসে। তখন টিটিই শফিকুল ইসলাম গিয়ে টিকেট দেখতে চান। এসি রুমের টিকেট না পেয়ে টিটিই তাঁদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। তখন তাঁরা নিজেদের রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিলে টিটিই আরও ক্ষেপে যান। তিনি বলেন, ‘ট্রেন কি আপনাদের বাবার।’”
এদিকে, এ ঘটনায় রেলের পাকশি বিভাগীয় সহকারী পরিবহণ কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্য দুই সদস্য হলেন সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী শিপন আলী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সহকারী কমান্ড্যান্ট আবু হেনা মোস্তফা কামাল।
এদিকে, রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে বিনা টিকেটে ভ্রমণের অভিযোগে জরিমানা করার ঘটনায় টিটিইকে সাময়িক বরখাস্তের পর সারা দেশে তোলপাড় চলছে। তবে, মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন দাবি করেছেন, বিনা টিকেটে ভ্রমণ করা রেলযাত্রীরা তাঁর কোনো আত্মীয় নন।
অন্যদিকে, টিটিই শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঈশ্বরদী থেকে অল্পবয়সী তিন যাত্রী রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের এসি কেবিনে ওঠেন। মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেওয়ায় আমি সম্মান দেখিয়ে এসিও স্যারের পরামর্শে এসির টিকেট না কেটে সুলভ শ্রেণির নন-এসি কোচে সাধারণ আসনের বানিয়ে দেই। আমি তো তাঁদের সঙ্গে কোনোরকম অসদাচরণ করিনি।’