লেখক হুমায়ুন আহমেদ বাংলাদেশের সম্পদ : শাওন
জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক ও লেখক হুমায়ূন আহমেদের ৭৩তম জন্মবার্ষিকীতে তার পরিবার এবং ভক্তরা ভালবাসা ও শ্রদ্ধার পালন করেছে। দিবসটি উপলক্ষে গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী গ্রামে হুমায়ূন আহমেদের হতে গড়া নুহাশপল্লীতে নানা আয়োজন করা হয়।
আজ শনিবার সকাল থেকেই হুমায়ূন আহমেদের ভক্তরা কবরে শ্রদ্ধা জানাতে নুহাশ পল্লীতে ভিড় জমায়।
নুহাশপল্লীর ব্যবস্থাপক মো. সাইফুল ইসলাম বুলবুল জানান, গতকাল শুক্রবার রাত ১২টা ১ মিনিটে হুমায়ূন আহমেদের হতেগড়া নুহাশ পল্লীতে এক হাজার ৭৩টি মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করেন নুহাশ পল্লীর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ভোর রাত সাড়ে ৪টার দিকে হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ছেলে নিষাদ ও নিনিতকে নিয়ে নুহাশ পল্লীতে আসেন। পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি দুই ছেলেকে নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। তারা কবরের পাশে দাঁড়িয়ে ফাতেহা পাঠ, কবর জিয়ারত ও মোনাজাত করেন।
প্রয়াত লেখকের কবর জিয়ারত শেষে নুহাশ পল্লীতে হোয়াইট হাউসের পাশে স্থাপিত হুমায়ূন আহমেদের ম্যুরালের সামনে আপেল গাছতলায় দুই ছেলে নিষাদ ও নিনিতকে নিয়ে হুমায়ুন আহমেদের ৭৩তম জন্মবার্ষিকীর কেক কাটেন মেহের আফরোজ শাওন। জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিকের জন্মদিন উপলক্ষে শতাধিক হুমায়ূনভক্ত, গণমাধ্যমকর্মী ও নুহাশ পল্লীর কর্মচারীরাসহ এলাকার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
কেক কাটা শেষে মেহের আফরোজ শাওন সাংবাদিকদের সঙ্গে বলেন, ‘যারা হুমায়ূন আহমেদকে ভালোবাসেন, তাদের অনেকেই তাকে নিয়ে কাজ করতে চান। তবে একটা অনুরোধ করছি, তাকে নিয়ে যা ইচ্ছে তা কেউ করবেন না। লেখক হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের সম্পদ। হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে অনেকেই গবেষণা করছেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সাহিত্য নিয়ে পিএইচডি হচ্ছে। অনেকেই চর্চা করছেন। দেশের সম্পদ হুমায়ুন আহমেদকে নিয়ে ভালভাবে চর্চা হোক, সেই চর্চাটা বাড়ুক। ছাত্ররা হুমায়ূন আহমেদ সম্পর্কে জানুক। সবাই জানুক। কোন ভুল চর্চা না হোক, এটা আমার একটা বড় প্রত্যাশা।’
শাওন আরও বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্টিকর্ম নিয়ে যেনতেনভাবে কাজ করার চেষ্টা বা তাকে নিয়ে হঠাৎ করে একটা সিনেমা বানিয়ে ফেলা, একটা বই লিখে ফেলা বিষয়টি নিয়ে আমার খুব খারাপ লেগেছে।’
এদিকে সকাল থেকেই হুমায়ুন আহমেদের ভক্তদের সংগঠন ‘হিমু পরিবহণ’র সদস্যদের গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে ভিড় জমাতে দেখা গেছে। তারা প্রিয় কথা সাহিত্যিক ও লেখক হুমায়ূন আহমেদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এবং ঘুরে ঘুরে নুহাশ পল্লী দেখেন। দিবসটি উপলক্ষে নুহাশ পল্লীতে এদিন প্রবেশ ফি ফ্রি করা হয়েছিল।
‘হিমু পরিবহণ’ এর সমন্বয়ক মুহাম্মদ লিংকন বলেন, ‘হুমায়ুন স্যারকে না দেখার আক্ষেপটা আমৃত্যু রয়ে যাবে। স্যারের জন্মদিন উপলক্ষে সকালে একদল হিমু পরিবহণ তাদের প্রিয় লেখকের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। যাত্রা পথে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্যান্সার সচেতনমূলক লিফলেট বিতরণ করেন তারা। বিকেলে গাজীপুর শহরের রাজবাড়ী মাঠ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রাঙ্গণে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কেক কাটে তারা এবং সন্ধ্যায় মোমবাতি প্রজ্জলন এবং হুমায়ুন আহমেদের জীবনী ও কর্মের ওপর আলোচনা করে।
উল্লেখ্য, সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নবেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়া থানার কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দূরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরে গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে তাকে সমাহিত করা হয়।