শুরু হলো ফলের রাজা আমের মৌসুম
বাজারে এসেছে ফলের রাজা আম। রাজশাহীতে গাছ থেকে গুটি আম পাড়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে আমের মৌসুম। তবে জনপ্রিয় জাতের আমের জন্য ভোক্তাদের অপেক্ষা করতে হবে কমপক্ষে আরও এক সপ্তাহ। যদিও আমের ফলন গতবারের তুলনায় কম। আর তাই দামে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী, আজ শুক্রবার থেকে গুটিজাতের আম দিয়ে শুরু হয়েছে আমের মৌসুম। তবে, পর্যায়ক্রমে এ মাসের শেষ সপ্তাহে বাজারে আসবে জনপ্রিয় গোপালভোগ, হিমসাগর, লক্ষণভোগ। আর জুনের শুরুতে পাওয়া যাবে ল্যাংড়া। আগস্ট মাসে ইলামতি জাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে আমের মৌসুম।
গত দুই বছর ফলন বেশি হলেও করোনার কারণে লোকসান গুনতে হয়েছে আমচাষিদের। এবার রাজশাহীর প্রায় অর্ধেক বাগানে মুকুল কম আসায় বাজারে আমের মূলে এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন আমচাষিরা।
শুক্রবার পবা উপজেলার কাটাখালিতে গিয়ে দেখা যায়, আলাল হোসেন নামে এক আমচাষি নিজেদের বাগানের আম পাড়ার কাজ করছেন। তিনি জানান, ভালো জাতের পাশাপাশি তাঁর বাগানে কিছু গুটি জাতের আম আছে। সেগুলো পেকে যাবে। সেই সব আমগুলো নিজেদের খাবারের পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করার জন্য নামাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
রাজশাহী অ্যাগ্রো ফুড প্রডিউসার সোসাইটির সভাপতি আনোয়ারুল হক এনটিভি অনলাইনকে জানান, গত দুই বছর করোনার কারণে বাগান মালিকরা লোকসান গুনেছেন। গত বছর আমের ভরা মৌসুমে সরকার লকডাউন কড়াকড়ি করায় বাজারজাত করতে না পারায় গাছ থেকে আম নামানো যায়নি। আম পেকে মাটিতে পড়ে পঁচে গেছে। যে আমচাষি ১০ লাখ টাকা আম বিক্রির টার্গেট নিয়েছিলেন, তিনি সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকার আম বিক্রি করতে পেরেছেন। তবে, এবারের পরিস্থিতি ভালো। আমের ফলন কম হয়েছে। ফলে এবার আমের ভালো দাম পাবেন বলে মনে করেন আনোয়ারুল হক।
আনোয়ারুল হক জানান, গত বছর মৌসুমের শুরুতে গুটি জাতের যে আম তিনি চার থেকে ৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন, সেই আম শুক্রবার তিনি বাগানে বসে পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেছেন এক হাজার ২০০ টাকা মণ দরে। তার মতে, এবার ভোক্তাদের বেশি দামে আম খেতে হবে। ভালো জাতের গোপালভোগ আম কমপক্ষে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা মন দরে পাইকারি বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি মনে করছেন।
এদিকে, আম বাজারজাতকরণ বিষয়ে রাজশাহী জেলার অতিরিক্ত প্রশাসক মুহাম্মদ শরিফুল হক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় এবারে আমের বাজারজাতকরণে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না।’
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে বিভিন্ন জাতের আম গাছ থেকে নামানোর তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। নির্ধারণ করা দিনপঞ্জির আগেই অনেকে নানাজাতের আম বাজারে নিয়ে আসে বলে অনেক সময় অভিযোগ ওঠে। সেদিকটা এবার কঠোরভাবে মনিটরিং করা হবে।’
রাজশাহীতে এবার ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে দুই লাখ ১৪ হাজার ৬৭৬ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী কয়েকটি ধাপে গাছ থেকে আম নামাতে পারবেন চাষিরা। এর মধ্যে শুক্রবার গুটি জাতের আম নামানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে এই প্রক্রিয়া। এ ছাড়া ২০ মে গোপালভোগ, ২৫ মে লক্ষনভোগ ও রাণিপছন্দ, ২৮ মে খিরসাপাত ও হিমসাগর, ৬ জুন ল্যাংড়া, ১৫ জুন আম্রপালি ও ফজলি, ১০ জুলাই বারি-৪ ও আশ্বিনা, ১৫ জুলাই গোলমতী এবং সর্বশেষ ২০ আগস্ট ইলমতি আম গাছ থেকে নামিয়ে বাজারজাত করতে পারবেন চাষিরা।