সন্তানদের পড়াতে কষ্ট হয় পারভীনের, দিনে পান ১০২ টাকা
‘এক হাজিরায় ১০২ ট্যাকা পাই। এই ট্যাকা দিয়ে চলে না। বহু কষ্ট করে সংসার চালাতে হয় আমাদের। নিজে না খাইয়া ছেলেমেয়ের স্কুলের ট্যাকা দিতে হয়। মালিক বেতন বাড়ায় না। রোগ ব্যারাম হলে টাকার অভাবে দিন চলে না।’
গত শুক্রবার রাজধানীর প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত ‘চা-শ্রমিক সমাবেশ’ শেষে কথাগুলো এভাবেই বলছিলেন সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের মমিনছরা চা বাগানের চা শ্রমিক পারভীন বেগম।
পারভীন বেগমের মেয়ে শারমিন আক্তার সাইফুল চাকমিনা মাদ্রাসায় নবম শ্রেণিতে পড়ে। আর ছেলে জাহিদ হাসান আশার আলো স্কুলের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। তাদের দুজনের লেখাপড়ার খরচ বহন করতে খুব কষ্ট হয় তাঁর।
পারভীন বেগম বলেন, ‘২০০৬ সাল থেকে এই চা বাগানে কাজ করি। প্রথমে হাজিরা ছিল ২২ট্যাকা। সেহান থেকে বাইড়া এহন ১০২ ট্যাকা হইছে। মালিককে বেতন বাড়াইতে কইলে শোনে না। এই ট্যাকা দিয়ে কিছু হয় না। ভালো কিছু কিন্না খাইতে পারি না। রুটি খাইয়া খাইয়া থাকতে অয়। তিনবেলার ভেতরে দুই বেলা রুটি খাই।’
আজ রোববার বিশ্ব নারী দিবসের দিন পারভীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘চা বাগানে কাজ করি। কাজ না করলে ট্যাকা নাই। বাড়ি বসে থাকলে ছেলে-মেয়েরে পড়াব ক্যামনে?’
পারভীন বেগম বলেন, ‘খাইয়া না খাইয়া ছেলেমেয়েদের ট্যাকা দেই স্কুলে। আর অসুস্থ হয়ে গেলে বাগান থেকে শুধু দুইটা ওষুধ দেয়। পরেরদিন গেলে আবার কাইটা দেয়। আর বেশি অসুস্থ হলে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। তখন আর হাজিরা দিতে পারি না।’
পারভীন বেগমের সঙ্গে একই বাগান থেকে মোট ৩২ জন চা শ্রমিক গত শুক্রবার প্রেসক্লাবের সামনে হাজির হয়েছিলেন। তাদের ভেতরে সোনামনি নামের আরেক নারী চা শ্রমিক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমার দুইটা ছেলে বাচ্চা আছে। ওদের ঠিক মতো খেতে দিতে পারি না। সব সময় আটার রুটি খাইয়া থাকতে হয়। দুই বাচ্চা খাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করে। কিন্তু মালিক বেতন বাড়ায় না। আবার অসুস্থ থাকলে বেতন কাটা। হাজিরা না দিলে ট্যাকা নাই।’
প্রেসক্লাবে নওগাঁ জেলা থেকে এসেছিলেন মরিয়ম বেগম। তিনি ১৬ বছর ধরে চা বাগানে কাজ করেন। তিনি বলছিলেন, ‘১০ ঘণ্টা খাইটা ১২০ টাকা পাই। এই টাকা দিয়ে কিছুই হয় না। তাই দিনপ্রতি ৪০০ টাকা বেতনের দাবিতে এখানে এসেছি। আমাদের দিকে কেউ তাকায় না। সবাই আমাদের চাপাই রাখে।’