‘সরকারি দল না করলে চাকরি মেলে না, ব্যবসা করা যায় না’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, ‘বৈষম্যের কারণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ম্লান হয়ে যাচ্ছে। বৈষম্যের কারণে ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধান বেড়ে যাচ্ছে। সরকারি দল না করলে চাকরি মেলে না, ব্যবসা করা যায় না। এমনকি, শোনা যাচ্ছে এমপিওভুক্ত শিক্ষা পদ্ধতি, শিক্ষক বদলি ও নিয়োগে রাজনৈতিক বিবেচনা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।’
আজ বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বনানীর কার্যালয়ে জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভায় গোলাম মোহাম্মদ কাদের এসব কথা বলেন।
জাপা চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমরা আইনের শাসন চাই। আমরা ন্যায়বিচার ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা চাই। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দুর্নীতি ও দুঃশাসনে দেশের মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। দেশের মানুষের সম্মান, সম্পদে ও জীবনের নিরাপত্তা নেই। বৈষম্যের কারণে একটি অসম রাষ্ট্র তৈরি হচ্ছে। এমন একটি দেশের জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়নি। মানুষে-মানুষের বৈষম্য হচ্ছে স্বাধীনতার চেতনা পরিপন্থি।
জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির সভাপতি শেরিফা কাদের এমপির সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আলাউদ্দিন আহমেদ এর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরও বলেন, দেশের শিক্ষা ও চিকিৎসার মান ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। এখন বিদ্যালয়গুলোতে বড় বড় ভবন হচ্ছে, আধুনিক ল্যাব হচ্ছে কিন্তু মানসম্মত শিক্ষা নেই। যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না। জিপিএ বাড়ছে, সার্টিফিকেট বাড়ছে কিন্তু সঠিক শিক্ষা ব্যবস্থার অভাবে শিক্ষার মান বাড়ছে না। কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার পদক্ষেপ নেই। ফলে, শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলছে। আবার, বেসরকারি পর্যায়ে উন্নত মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি হচ্ছে, যেগুলো অত্যন্ত ব্যয়বহুল। সাধারণ মানুষের পক্ষে এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্তানদের পড়াশোনা চালানো সম্ভব হয় না। তাই, বেশিরভাগ মানুষের পক্ষে সন্তানের জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরও বলেন, বড় বড় ভবনের সাথে হাসপাতালে বেডের সংখ্যা বাড়ছে কিন্তু চিকিৎসা সেবার মান বাড়ছে না। অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি স্থাপন হচ্ছে, আধুনিক যন্ত্রপাতি দেওয়া হচ্ছে কিন্তু চিকিৎসকের অভাবে এবং ব্যবস্থাপনার অভাবে সাধারণ মানুষ উপকৃত হচ্ছে না। বেসরকারি পর্যায়ে আধুনিক সুবিধাদিসহ হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। সেখানে চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল, যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। তাই, দেশের বেশির ভাগ মানুষ মানসম্মত শিক্ষা ও চিকিৎসা পাচ্ছে না। বৈষম্যের কারণে, দেশে শোষক ও শোষিত শ্রেণির সৃষ্টি হয়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরও বলেন, সংস্কৃতি হচ্ছে একটি জাতির পরিচয়। সংস্কৃতিকে ভিত্তি করেই জাতীয়তা ও রাষ্ট্র গঠন হয়। কিন্তু, দুঃখজনকভাবে আমরা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি হারিয়ে ফেলছি। দিনে দিনে আমাদের নিজস্বতা বিলুপ্ত হচ্ছে। ভিনদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসনে আমাদের সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। সংস্কৃতি রক্ষায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা দৃশ্যমান হচ্ছে না। নিজস্ব সংস্কৃতি সংকুচিত হলে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য হারিয়ে জাতি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। দেশীয় সংস্কৃতি রক্ষায় জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টিকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশে দুর্নীতি, দুঃশাসন, টাকা পাচার, সন্ত্রাস ও টেন্ডারবাজি উপহার দিয়েছে। দেশের অনেক উন্নয়ন হচ্ছে, কিন্তু সাধারণ মানুষের কোনো উপকার হচ্ছে না। শত কোটি টাকা ব্যয়ে পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র তৈরি হচ্ছে। এই টাকায় প্রতিটি উপজেলায় স্পেশালাইজড হাসপাতাল তৈরি হলে দেশের মানুষ বেশি উপকৃত হতো। বর্তমান ব্যবস্থায় কখনোই নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব হবে না। নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আনুপাতিক হারে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আহমেদ এর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির সভাপতি শেরিফা কাদের। বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, নুরুন্নাহার বেগম, খন্দকার দেলোয়ার জালালী, মো. হাবিবুল্লাহ ফকির, রাজিব কান্তি গুহ, জিএম রাজু, চম্পা মণ্ডল, হিমেল, মোস্তফা জামান বাবু, ফয়েজ মুন্না, মাহমুদা আমির শিল্পী, পংকজ দাস, মনোয়ার-ই-খোদা চৌধুরী (মন্টি)।