সাতকানিয়ায় নির্বাচনে ‘বহিরাগতদের’ অস্ত্রবাজি
দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার নলুয়া ইউনিয়নের মরফলা বোর্ড অফিস কেন্দ্র। সোমবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ কার্যক্রম বেশ সুন্দরভাবেই চলছিল।
কেন্দ্রে নীরবে ভোটগ্রহণ আর কেন্দ্রের বাইরে বিরাজ করছিল উৎসব মুখর পরিবেশ। কিন্তু, হঠাৎ করে দমকা হাওয়ার মতো কিছু লোক লাঠিসোটা, রামদা, কিরিচ নিয়ে এসে ভোটকেন্দ্রের বাইরে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে ভোটকেন্দ্রের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা স্কুলছাত্র তাসিফকে (১৩) কুপিয়ে হত্যা করে। কারা করল এমন কাজ?
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, বহিরাগত লোকজনই আচমকা এসে এমন জঘন্য কাজটি করেছে। তাসিফের স্বজনদের অনেকেই নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা লিয়াকত আলীর সমর্থক। তাঁদেরই একজন কৃষকলীগের ইউনিয়ন পর্যায়ের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এ (বোর্ড অফিস) কেন্দ্রটি ছিল অনেকটা আমাদের দখলে। ভোটারদের চেয়ারম্যানের ব্যালট পেপারটি দেওয়া হচ্ছে না। এ নিয়ে কারও প্রতিবাদও নেই। শুধু মেম্বার পদপ্রার্থীদের ব্যালটটিতেই পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিচ্ছেন ভোটারেরা। এমন সময় দমকা হাওয়ার মতো আচমকা কিছু লোক এসে আতঙ্ক তৈরি করে স্কুল শিক্ষার্থী তাসিফকে হত্যা করল।’
হামলাকারীরা কারা? এমন প্রশ্নের জবাবে কৃষকলীগনেতা বলেন, বিজয় নিশ্চিত করতে অনেক প্রার্থীই বহিরাগতদের সমাবেশ ঘটিয়েছে। তারাই আতঙ্ক তৈরি করার জন্য এমনটি ঘটিয়ে থাকতে পারে। বখাটে টাইপের শতাধিক যুবক অবস্থান নিয়ে বাজালিয়া ইউনিয়নের বোর্ড অফিস কেন্দ্রটির পশ্চিম দিক থেকে ভোটারদের আসতে বাধা দিচ্ছিল বারবার—এমন অভিযোগ ছিল স্বতন্ত্র প্রার্থী শহীদুল্লাহ চৌধুরীর। দুপুর ১২টার দিকে আরেকটি গ্রুপ শঙ্খনদ পার হয়ে ভোটারদের বাধা দেওয়া যুবকদের (অপরিচিত) ওপর হামলা করে। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময়ের ঘটনাও ঘটে। পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আব্দুশ শুক্কুর নামের একজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে কেরানীহাটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। সাতকানিয়ায় তাঁর কোনো স্বজন না থাকায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা মোহাম্মদ মুন্না ও হৃদয় নামের দুই যুবক জানান, নিহত শুক্কুর থাকেন নগরীর শুলকবহর এলাকায়। তাঁরা জানান, নৌকা প্রতীকের পক্ষে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের জন্য নিহত শুক্কুরসহ তাঁরা ১০০ যুবক এসেছিলেন। তাঁরা একটি কেন্দ্রে অবস্থান নিলে অপর প্রার্থীর লোকজন তাঁদের ওপর হামলা চালায়। এতে শুক্কুর নিহত এবং আরও সাত জন আহত হন।
আহতদের চিকিৎসার জন্য স্থানীয় ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ছাড়া খাগরিয়ায় ঘটে দুই প্রার্থীর পক্ষের লোকজনের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা। ওই দৃশ্য ধরা পড়ে সাংবাদিকদের ক্যামেরায়। অস্ত্র হাতে বীরত্ব প্রদর্শন করা অনেকেই বহিরাগত বলে ধারণা করছে এলাকার মানুষ। ভোটের আগের দিন থেকে বহিরাগতদের এলাকা ছাড়ার স্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও শত শত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের চোখ এড়িয়ে অস্ত্রবাজিতে লিপ্ত হওয়ার ঘটনায় এলাকাবাসীর পাশপাশি বেশ চিন্তিত প্রশাসনও।
এ বিষয়ে সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল জলিল বলেন, সন্ত্রাসমুক্ত সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমাদের প্রচেষ্টার কোনো কমতি ছিল না। আমরা ভোটের আগের রাতে অস্ত্রসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছিলাম। তাদের আজ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। অস্ত্রবাজিতে জড়িতদের ছবি ও ফুটেজ আমরা যাচাই বাছাই করছি। বহিরাগতসহ অস্ত্রবাজি করা ব্যক্তিদের পরিচয় শনাক্ত করে দ্রæত গ্রেপ্তার করা হবে।
নিহত শুক্কুরের বিষয়ে ওসি বলেন, শুক্কুরের বাড়ি সাতকানিয়ায় নয়। আমরা তার রেকর্ড পর্যালোচনা করে তার বিরুদ্ধে বোয়ালখালী থানায় একটি ডাকাতির মামলা পেয়েছি। তার বিষয়ে আরও জানার চেষ্টা করছি।