সাতক্ষীরায় সিরিজ বোমা হামলার দায়ে ১৪ জঙ্গির কারাদণ্ড
সাতক্ষীরায় ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলার মামলার রায়ে আট আসামিকে ১৩ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া এ মামলায় আরো ছয় আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। খালাস পেয়েছেন এক আসামি।
নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ও পিন পতন নীরবতার মধ্যে জনাকীর্ণ আদালতে দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর পর আজ বুধবার এই রায় ঘোষণা করেন সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মো. শরিফুল ইসলাম।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সংশ্লিষ্ট আদালতের সরকারি আইনজীবী (পিপি) আব্দুল লতিফ। তাঁকে সহায়তা করেন অতিরিক্ত পিপি আব্দুস সামাদ। রায়ের সময় কারাগারে থাকা আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়।
রায়ের পর দুই আইনজীবী আদালত চত্বরে গণমাধ্যমকে বলেন, সাক্ষীদের সাক্ষ্যপ্রমাণ ও আলামত জব্দের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে যে, আসামিরা দোষী। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তাঁরা আরো বলেন, এই বিচারের মধ্য দিয়ে দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই রায়ের কারণে ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো অপরাধের সঙ্গে কেউ জড়িত হবে না বলেও প্রত্যাশা করেন তাঁরা।
অপরদিকে মামলায় আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট জি এম আবুবকর সিদ্দিক। তিনি আইনের বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে ৩, ৪, ৬ ধারা প্রযোজ্য নয়। ন্যায়বিচার হয়নি।
মামলায় বাদীসহ ১৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। বোমার হামলার ঘটনায় মোট ছয়টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এর মধ্যে পাঁচটি মামলায় সবাইকে খালাস দেওয়া হয়।
আরেকটি মামলায় মোট ১৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই মামলার আসামিদের মধ্যে আগের মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় চার আসামিকে মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়। একজন কারাগারে মারা যাওয়ায় তাকেও মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। রায়ে একজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। দণ্ডিত আসামিদের মধ্যে চারজন পলাতক আছেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সাতক্ষীরা শহরের শহীদ রাজ্জাক পার্ক, কালেকটরেট চত্বর, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত চত্বর, হাসপাতাল মোড় ও বাস টার্মিনাল- এই পাঁচটি স্থানে একযোগে বোমা বিস্ফোরণ এবং জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) প্রচারপত্র ছড়ানো হয়।
সকালে এ ঘটনার পর বিকেলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত চত্বরে বোমাহামলাকারী সন্দেহে শহরতলির বাঁকাল গ্রামের নাসিরউদ্দিন দফাদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, ভারতীয় নাগরিক গিয়াসউদ্দিনসহ আরও অনেক আসামি একে একে গ্রেপ্তার হন।
এ ছাড়া পুলিশ শহরের রসুলপুরে জেএমবির ঘাঁটিতে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল বোমা তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করে। মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের মধ্যে ১৩ জনকে ঢাকায় জেআইসিতে (জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঠানো হয়। এ সংক্রান্ত ছয়টি মামলায় তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি পুলিশ ২০০৬ সালের ১৩ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দেয়।
এসব মামলায় আসামিদের মধ্যে যাদের নাম রয়েছে তাদের মধ্যে আছেন মনিরুজ্জান মুন্না, আনিসুর রহমান খোকন, মনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল, মো. গিয়াসউদ্দিন, বিল্লাল হোসেন, রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ, মসিউজ্জামান ওরফে মুকুল ডাক্তার, শামীম হোসেন গালিব ওরফে সাইফুল্লাহ, আবদুল আহাদ, আশরাফ মাস্টার, আলমগীর হোসেন ওরফে আশা, মামুনুর রশীদ, ওবায়দুল ইসলাম, আসাদুল ইসলাম হাজারী, মাহবুবুর রহমান লিটন, মো. আসাদুজ্জান, মমতাজউদ্দিন, নূর আলী মেম্বার, ফখরুদ্দিন গাজী, আবুল খায়ের ও নাইমুদ্দিন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা গণমাধ্যমকে বলেন, আজকের মামলায় কোন আসামিকে কত দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, তা পরে জানানো যাবে। এখনো কাগজপত্র হাতে পাইনি।