সিরাজগঞ্জে আ.লীগ-বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ, আহত অর্ধশতাধিক
সিরাজগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামান, সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান নাসিম রেজা নূর দিপুসহ বিএনপি ও আওয়ামী লীগের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
সংঘর্ষ চলাকালে জেলা বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে। এ ঘটনায় শহরজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
আহত হয়েছেন জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামান, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আলী স্বপন, শামীম হোসেন, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক তাইবুল হাসান, ফিরোজ আহমেদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসাধারণ সম্পাদক আবদুল হাকিম, সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান এস এম নাসিম রেজা নূর দিপু, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মো. রাসেল আহমেদসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সিরাজগঞ্জ ভাসানী মিলনায়তন চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে জেলা বিএনপি। অপর দিকে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের আয়োজনে বিজয় র্যালি শহর প্রদক্ষিণ করে। এতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। বিজয় র্যালিটি রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্থানীয় ভাসানী মিলনায়তন এলাকায় পৌঁছালে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামান বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে হামলা চালায়। এতে আমিসহ বিএনপির অন্তত ৩০ নেতাকর্মী আহত হয়েছি।’
সিরাজগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি প্যানেল মেয়র হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘বিজয় র্যালিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, সর্বস্তরের দলীয় নেতাকর্মীসহ সহস্রাধিক বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন। র্যালিটি সরকারি কলেজ থেকে শান্তিপূর্ণভাবে বের হয়ে তিনশ গজ দূরে ইলিয়ট ব্রিজ-কালিবাড়ী রোডে ওঠামাত্র বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের কতিপয় সন্ত্রাসী আমাদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। এরই একপর্যায়ে তারা পুলিশের সঙ্গেও দফায় দফায় সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। তাদের হামলায় আমি নিজেসহ কমপক্ষে ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছি। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।’
অপর দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু স্থানীয় নেতাকর্মীদের বরাত দিয়ে বলেন, ‘বিজয় র্যালি থেকে সরকারদলীয় লোকজন উসকানিমূলকভাবে বিএনপির লোকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমাদের কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ নেতাকর্মীর ওপর গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। তারা জেলা বিএনপির কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও ইলিয়ট ব্রিজ রোডের বেশ কয়েকটি দোকানপাট ভাঙচুর করে। বিষয়টি ন্যক্কারজনক।’
পুলিশ সুপার কার্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু ইউসুফ বলেন, বিজয় র্যালির ওপর হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. ফোরকান শিকদার বলেন, পুলিশ সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে বিএনপির লোকজন পুলিশের ওপর উল্টো হামলা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।