সিরাজগঞ্জে তীব্র নদীভাঙন, শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন
ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এবং দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলসহ এর কাছাকাছি ভারতের আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের কারণে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। গত তিন দিনে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় শতাধিক ঘরবাড়ি, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এ ছাড়া হুমকির মুখে রয়েছে স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদসহ বহু স্থাপনা। ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেতে অনেকে ঘর থেকে আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।
এদিকে ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে পাউবোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভাঙন রোধে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পের বরাদ্দের টাকা হাতে পেলেই স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হবে।
এলাকাবাসী জানায়, যমুনা নদীতে পানি বাড়ার কারণে গত কয়েকদিন ধরে জেলার শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুড়ী, জালালপুর ও খুকনী ইউনিয়নের পাচিল, হাট পাচিল, পাকরতলা, ব্রক্ষনগ্রাম, জয়পুরা, আরকান্দি, কুঠিপাড়া, ভেকা গ্রামে, এনায়েতপুর থানার দক্ষীণে তীব্র নদী ভাঙন চলছে। মুহূর্তের মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেতে আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে গ্রামবাসী। বাড়িঘর হারিয়ে ভাঙনকবলিত মানুষদের অনেকে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। সহায়-সম্বল হারিয়ে ছেলে-মেয়ে নিয়ে এসব মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এই ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এরই মধ্যে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন মন্ডল, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক ও পাউবোর সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার। তাঁরা ভাঙন রোধে প্রকল্প নেওয়ার কথা বলেছেন। প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে বলে সিরাজগঞ্জ পাউবো সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয় মইতন বেগম বলেন, ‘আমার বাড়ি নদীতে ভেঙে বহু জিনিসপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরবাড়ি হারিয়ে ছেলে-মেয়ে নিয়ে অনেক অসুবিধার মধ্যে আছি। অনেক ক্ষতি হয়েছে আমার। চার দিন থেকে শুধু ভাঙছে। যেটুকু জমি ছিল, তা নদীতে গেছে। এখন দাঁড়ানোর মতো জায়গা আমাদের নাই। যেভাবে নদী ভাঙছে, তাতে কোনো বাড়িঘর থাকবে না।’
ডালিম বেগম বলেন, ‘ঘরবাড়ি ভেঙে সব নদীর মধ্যে যাচ্ছে। কোথায় যাব, কী করব, কিছুই জানি না। এখন কী খেয়ে বাঁচব, আর কোথায় দাঁড়াব, সে জায়গা আমাদের নাই। বাঁশ-খুঁটি টানতে টানতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। এখনও অনেক অসহায় মানুষ আছে। এই সময় যদি ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হতো, তাহলে এলাকার মানুষ রক্ষা পেত।’
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নুরুজ্জামান বলেন, আমরা এলাকাবাসী হিসেবে জানতে পেরেছি, ভাঙন রোধে পাউবো কাজ করবে। পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর শ্বশুরবাড়ি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে। তিনি কিছুদিন আগে ঘটনাস্থলে এসেছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন, ভাঙন রোধে অচিরেই কাজ শুরু হবে। এখনও তার কোনো প্রতিফলন আমরা দেখতে পাইনি। নদী ভাঙনের ফলে মানুষ রাস্তার ফকির হয়ে যাচ্ছে। শত বছরের বাপ-দাদার বাড়িঘর রেখে রাস্তায় চলে যাচ্ছে। মন্ত্রী বলেছিলেন, এক চাপ মাটিও আর নদীতে পড়বে না। তারপরও নদী ভাঙছে। গত কয়েকদিনে প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে।’
সিরাজগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এনায়েতপুরের খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ থেকে কৈজুড়ী পর্যন্ত সাড়ে ছয় কিলোমিটার এলাকায় নদী ভাঙন রয়েছে। এই জায়গায় ভাঙন রোধে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে একনেকে অনুমোদন হবে বলে আমরা আশা করছি। প্রকল্পটি অনুমোদন হলে স্থায়ী কাজ শুরু করব। তখন আর নদী ভাঙন থাকবে না।’