সেচের পানি না পেয়ে আত্মহত্যা : বিএমডিএকে তদন্তের আওতায় আনার দাবি
রাজশাহীতে সেচের পানি না পেয়ে দুই কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনায় গভীর নলকূপের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিএমডিএকে তদন্তের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে। নিহতের পরিবার ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে তারা।
আজ শনিবার দুপুরে নগরীতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানিয়ে নিহতের স্বজনেরা বলেন, ‘ভবিষ্যতে আর কোনো কৃষককে পানির জন্য যেন জীবন দিতে না হয়, সেজন্য বরেন্দ্র অঞ্চলে গভীর নলকূপ পরিচালনায় কৃষিবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন করে সুষ্ঠু তদারকির বিধান রাখতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সামাজিক সংগঠন রক্ষাগোলা সমন্বয় কমিটির সদস্য রঞ্জিত পাহাড়িয়া। সেখানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে গভীর নলকূপের অপারেটর হিসেবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও প্রান্তিক কৃষকদের অগ্রাধিকার এবং তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে সেচের পানি নিশ্চিত করারও দাবি জানানো হয়।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে সংগঠনের সভাপতি সরল এক্কা, সাবেক সভাপতি প্রসেন এক্কা, নিহত কৃষক অভিনাথ মার্ডির স্ত্রী রোজিনা হেমব্রম ও নিহত রবি মার্ডির বড় ভাই সুশীল মার্ডি উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে কৃষক অভিনাথ মার্ডি ও রবি মার্ডির আত্মহত্যায় প্ররোচণাকারী গভীর নলকূপের অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনকে বিচারের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়। বলা হয়, অপারেটরেরা গভীর নলকূপের ট্রান্সমিটার পাহারা দেওয়ার জন্য প্রতি মৌসুমে কৃষকদের নিকট থেকে জনপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করেন এবং চেম্বার মেরামতের নাম করে ৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করেন। অপারেটরেরা নিজেদের পাওয়ার টিলার ছাড়া অন্য কোনো পাওয়ার টিলার দিয়ে কৃষককে জমি চাষ করতে দেন না।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অপারেটরেরা সেচের জন্য পানি প্রদানের সময় সিরিয়াল অনুসরণ করেন না। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কৃষকদের ক্ষেত্রে সিরিয়াল থাকলেও আট থেকে ১০ দিন ঘুরিয়ে ধানের জমিতে পানি দেন তাঁরা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, দুই সাঁওতাল কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনায় গঠিত কৃষি মন্ত্রণালয়ের চার সদস্যের তদন্ত কমিটি কাজ করছে। ওই কমিটিকে আরও বিস্তারিত এবং গভীর অনুসন্ধানের মাধ্যমে সেচের পানি নিয়ে দিনের পর দিন ধরে যেসব অনিয়ম ও অব্যবস্থপনা চলে আসছে, তা চিহ্নিত করতে হবে।
গত ২৩ মার্চ রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নিমঘুটু গ্রামের দুই সাওতাল কৃষক অভিনাথ মার্ডি ও রবি মার্ডি ধানের জমিতে গভীর নলকূপের পানি দিতে ব্যর্থ হয়ে কীটনাশক পান করেন। ওই রাতে নিজ বাড়িতে অভিনাথ ও ২৫ মার্চ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রবি মার্ডি মারা যান।
এ ঘটনায় কৃষি মন্ত্রণালয় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটি এরই মধ্যে কৃষি সচিবের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।