স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে হেফাজত নেতাদের লিখিত চার আবেদন
নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার অভিযান বন্ধে তৃতীয় দফায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে তাঁর ধানমণ্ডির বাসায় দেখা করেছেন হেফাজতে ইসলামের নেতারা। সেখানে তাঁরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে লিখিত চারটি আবেদন পেশ করেছেন।
গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টা ২০ মিনিটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমণ্ডির বাসভবনে প্রবেশ করেন হেফাজতের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির মহাসচিব ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদীসহ হেফাজতের নেতৃবৃন্দ। তারপর তাঁরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। রাত ১২টার দিকে বেরিয়ে আসেন হেফাজতের নেতারা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর হেফাজত নেতাদের লিখিত চার আবেদনে যা বলা হয়-
১. হেফাজতের গত আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে গ্রেপ্তার হওয়া আলেম-উলামা ও ধর্মপ্রাণ সাধারণ মুসলিমদের দ্রুত মুক্তির ব্যবস্থা করা।
২. দেশব্যাপী গ্রেপ্তার অভিযান এখনও অব্যাহত রয়েছে। ফলে পবিত্র রমজান মাসে ইবাদত-বন্দেগি করতে না পেরে অজানা আতঙ্কে দিন পার করছে আলেম-ওলামা ও সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষ। আপনার কাছে আবেদন—গ্রেপ্তার-আতঙ্ক ও হয়রানি থেকে তাদের মুক্তি দেওয়া। বিশেষ করে চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গণগ্রেপ্তার চলছে। এতে করে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। পবিত্র রমজান মাসে আলেম-উলামা ও সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের হয়রানি বন্ধ করতে আপনার নিকট বিশেষ অনুরোধ জানাচ্ছি।
৩. ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের নামে যেসব মামলা হয়েছিল, পূর্ব আলোচনা অনুযায়ী সে মামলাগুলো প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করা।
৪. বর্তমান পরিস্থিতিতে কুরআন-হাদিসের শিক্ষাকেন্দ্র কওমি মাদ্রাসাগুলো সরকারের নির্দেশে বন্ধ রয়েছে। আল্লাহর রহমত পাওয়ার জন্য পূর্বের ন্যায় এগুলো দ্রুত খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
লিখিত আবেদনের শুরুতে বলা হয়, ‘আশা করি আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমতে ভালো আছেন। আমরা আপনার সুস্বাস্থ্য কামনা করি। আপনি এ দেশের মাদ্রাসা-মসজিদ ও হক্কানি আলেম-উলামাদের অভিভাবকতুল্য। আলেম-ওলামা ও মাদ্রাসা-মসজিদের প্রতি আপনার আন্তরিকতা আমাদের মুগ্ধ করে। ধর্মীয় এই অঙ্গন যখনই কোনো সঙ্কটের মুখোমুখি হয়, আপনি দ্বীন ইসলামের ভালোবাসায় নিজ উদ্যোগে এর সমাধানে এগিয়ে আসেন এবং আন্তরিকতার সঙ্গে আমাদের পাশে দাঁড়ান। এজন্য আমরা সর্বদা আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ।
নিকট-অতীতে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিকে ঘিরে নতুন করে আবার সংকটে পড়েছে মাদরাসা-মসজিদ ও দেশের আলেম-উলামা এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা। এই সংকট নিরসনে আপনার দিকেই তাকিয়ে আছি আমরা। আপনি উদ্যোগ নিলে খুব দ্রুতই এর সমাধান হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’
এর আগে সর্বশেষ গত রোববার রাতেও হেফাজতের সাবেক দুই যুগ্ম মহাসচিব মাঈনুদ্দীন রুহী ও মুফতি ফয়জুল্লাহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসায় সাক্ষাৎ করেছিলেন। তাঁরা হেফাজতে ইসলামের প্রয়াত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর অনুসারী নেতা হিসেবে পরিচিত।
১৮ এপ্রিল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন ১৯ এপ্রিল রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বাসভবনে দেখা করেন হেফাজতের নেতারা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের জন্য তাঁর বাসায় যান মহাসচিব মাওলানা নূরুল ইসলাম জিহাদী, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের (বেফাক) মহাসচিব ও মামুনুলের বড় ভাই মাওলানা মাহফুজুল হক, হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজী প্রমুখ।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতা করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটান হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। এরপর তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয় সরকার। মাসখানেক ধরে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।