স্বাধীনতার ৫০ বছরেও জাতি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি : গণফোরাম
রাষ্ট্র বর্তমানে একটি ভয়ংকর নৈরাজ্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে—মন্তব্য করে দেশপ্রেমিক ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন গণফোরামের একাংশের নেতারা।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, সম্পাদক, বার্তা সম্পাদকসহ গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় গণফোরাম নেতারা এ আহ্বান জানান। রাজধানীর বাংলামোটরে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মতবিনিময় সভায় গণফোরামের একাংশের মুখপাত্র ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু, গণফোরামনেতা অধ্যাপক আবু সাইয়িদসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিকনেতা মনজুরুল আহসান বুলবুলসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সিনিয়র সাংবাদিকরা এ মতবিনিময় সভায় অংশ নেন।
জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় গণফোরামের মতবিনিময় সভা। এরপর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, স্বাধীনতার ৫০ বছরেও জাতি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। জাতীয় সংসদকে স্বৈরতান্ত্রিক কাঠামোতে পরিণত করা হয়েছে। জনগণের মালিকানা কেড়ে নিয়ে তাদের গোলাম করা হয়েছে।
গণফোরাম বলছে, আর্থিক খাতে লুটপাট চলছে। ঘুষ-দুর্নীতি চলছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবকিছু দলীয়করণ করা হয়েছে। এর থেকে বাঁচতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। বর্তমান অরাজক অবস্থা থেকে জাতিকে নিষ্কৃতি দিতে জাতীয় সরকার অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পরে মোস্তফা মোহসীন মন্টু তাঁর বক্তব্য দেন। গণফোরামের লিখিত বক্তব্য ও মোস্তফা মহসীন মন্টুর বক্তব্যে একবারও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম উচ্চারিত হয়নি।
এরপর মনজুরুল আহসান বুলবুল মতবিনিময়ে অংশ নিতে গিয়ে বলেন, সাংবাদিকরা জানতে আসেন, বক্তব্য দিতে আসেন না। তবু বলি, জাতির জনককে বাদ দিয়ে সুবর্ণজয়ন্তীর কোনো আয়োজন করা যায় না। অথচ আপনারা তাঁর নাম একবার উচ্চারণ করেননি। আপনাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. কামাল হোসেনসহ দলীয় এমপিরা এখানে অনুপস্থিত। এই বিষয়গুলো খোলাসা করা উচিত।
জবাবে গণফোরামের এই অংশের নেতা মোস্তফা মোহসীন মন্টু সরকারের সমালোচনা করে বলেন, এই সরকারের একটি নির্বাচনের সময় আপনি ফলাফলের কমেন্টারি করছিলেন। একপর্যায় আপনি অনুষ্ঠান থেকে উঠে চলে যান। হয়তো ওখানে কোনো হস্তক্ষেপ ছিল। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের অধিকার, সাগর-রুনী হত্যা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সমালোচনা করেও বক্তব্য দেন তিনি।
তখন মনজুরুল আহসান বুলবুল আবারও আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, ওটা একটা টকশো ছিল। সময় শেষ হলে উঠে যেতে তো হবেই। তবে সাগর-রুনীর হত্যার বিচার চেয়ে গণফোরামকে কখনো রাজপথে দেখিনি। এমনকি সাংবাদিকদের পাশেও কখনো এই গণফোরামকে দাঁড়াতে দেখিনি। সাংবাদিকদের দাবি-দাওয়া বা তাদের বিষয় নিয়ে যদি আলোচনা করতে চান, তাহলে জাতীয় প্রেসক্লাবে আসুন। এক কাপ কফি পান করবেন এবং সাংবাদিকদের বিষয় নিয়ে সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মোস্তফা মোহসীন মন্টু। ড. কামাল হোসেনের অনুপস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ড. কামাল হোসেন অসুস্থ। তিনি গণফেরামে আমাদের সঙ্গে থাকবেন কি না, সে বিষয়ে আগামী সম্মেলনে কাউন্সিলররা সিদ্ধান্ত নেবেন।’
আপনারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে আছেন কি না—এমন প্রশ্নে মন্টু বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এখন অকার্যকর। এই ফ্রন্টে আমরা থাকব কি না, সেটিও জাতীয় সম্মেলনে কাউন্সিলররা সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে আমাদের লক্ষ্য, স্বাধীনতার পক্ষের বিভিন্ন সংগঠন ও রাজনৈতিক দল এবং সাংবাদিকসহ অন্য পেশাজীবীদের নিয়ে একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা।