স্বামীকে ঘুম পাড়িয়ে শ্বাসরোধে হত্যা, পরে মাটি চাপা

গোপালগঞ্জে স্বামী কমলেশ বাড়ৈকে (৪৫) ঘুমের ওষুধ খাইয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এরপর লাশ গুম করতে আধা কিলোমিটার দূরে মাছের ঘেরপাড়ে মাটি চাপা দিয়ে লাশ পুঁতে রাখে।
গোপালগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অমিত কুমার বিশ্বাসের আদালতে কমলেশের স্ত্রী সুবর্ণা বাড়ৈ (৩৫) ও তাঁর পরকীয়া প্রেমিক মম্মথ বাড়ৈ (৪০) গতকাল বুধবার ১৬৪ ধারায় এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
সুবর্ণা কোটালীপাড়া উপজেলার তালপুকুরিয়া গ্রামের কাঠমিস্ত্রী কমলেশ বাড়ৈর স্ত্রী। মম্মথ বাড়ৈ একই গ্রামের মহেন্দ্র বাড়ৈর ছেলে।
তাঁরা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে জানান, তাঁদের মধ্যে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। এটি জানাজানি হওয়ার পর কমলেশ ও সুবর্ণার মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে সংসারে অশান্তি লেগেই ছিল। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় একাধিকবার সালিশ বৈঠক করা হয়। কিন্তু তারপরও তারা সে রাস্তা থেকে ফিরে আসেনি। গত জানুয়ারি মাসে সুবর্ণা ও তাঁর প্রেমিক মম্মথ মিলে কমলেশকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। সে মোতাবেক গত ২ ফেব্রুয়ারি মম্মথর সরবরাহ করা ঘুমের ওষুধ সুবর্ণা খাবারের মধ্যে মিশিয়ে কমলেশকে খাইয়ে দেন। কমলেশ গভীর ঘুমে আচেতন হয়ে পড়লে প্রেমিক মম্মথ ও সুবর্ণা মিলে কমলেশের গলায় গামছা দিয়ে প্যাঁচ দিয়ে শ্বাসরোধে তাঁকে হত্যা করেন। পরে তাঁরা বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে মম্মথর মাছের ঘেরপাড়ে মাটি চাপা দিয়ে লাশ পুঁতে রাখেন।

গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন জানান, কমলেশ নিখোঁজ হয়েছেন,জানিয়ে তাঁর ভাই রবেণ বাড়ৈ গত ৩ মার্চ কোটালীপাড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এটির তদন্তে নেমে পুলিশ গত ২৬ মে বিকেলে মম্মথর ঘেরপাড় থেকে মাটি খুঁড়ে কমলেশের লাশ উদ্ধার করে। পরে কমলেশের স্ত্রী সুবর্ণাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। রাতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে সুবর্ণার প্রেমিক মম্মথকে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বুধবার তাদের গোপালগঞ্জে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে তারা এ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন। এর মধ্য দিয়ে পরকীয়ার কারণে প্রায় ৪ মাস আগের একটি হত্যা ও লাশগুমের রহস্য উদঘাটিত হলো।
তবে স্থানীয়রা জানায়, গত মঙ্গলবার কোটালীপাড়ার কান্দি ইউনিয়নের তালপুকুরিয়া গ্রামের বিলের মধ্যে মম্মথের মাছের ঘেরপাড়ে গ্রামের বিপুল বাড়ৈ নামের এক লোক ঘাস কাটতে গিয়ে মাটি খোঁড়া দেখতে পান। পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মাটি খুঁড়ে কমলেশের লাশ উদ্ধার করে।
কোটালীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ লুৎফর রহমান বলেন, এ ঘটনায় কমলেশের ভাই রবেণ বাড়ৈ বাদী হয়ে সুবর্ণা ও মম্মথকে আসামি করে মঙ্গলবার রাতেই একটি হত্যা মামলা করেছেন।