ইতালি যাওয়ার প্রলোভনে মিয়ানমারে নিয়ে নির্যাতন-মুক্তিপণ আদায়, গ্রেপ্তার ৪

ইতালিতে চাকরি দেওয়ার প্রলোভনে মিয়ানমারে নিয়ে নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা ঘটেছে। গাজীপুরের কালীগঞ্জের বাসিন্দা আরিফ হোসেনকে (৪৫) ফাঁদে ফেলে কয়েক ধাপে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় মানবপাচার চক্রের সদস্যরা। এ ঘটনায় এক রোহিঙ্গাসহ মানবপাচার চক্রের চার সদস্যকে কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তার করেছে কালীগঞ্জ থানা-পুলিশ।
গ্রেপ্তারদের গতকাল শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন।
ওসি বলেন, চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় এক রোহিঙ্গাসহ আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও বন্দির স্বজনেরা জানান, দুই বছর আগে মালয়েশিয়ায় কর্মরত থাকা অবস্থায় দূরসম্পর্কের আত্মীয়র মাধ্যমে কক্সবাজারের রামুর পশ্চিম সিকদারপাড়ার আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩০) ও পূর্ব কলাতলির মোস্তাক আহমেদসহ অজ্ঞাত তিন-চারজনের সঙ্গে পরিচয় হয় আরিফ হোসেনের। সে সময় তারা বিদেশে লোক পাঠানোর ব্যবসা করে বলে জানায়। ২০২৩ সালে মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফেরেন আরিফ। এরপর তাকে ইতালি পাঠানোর প্রলোভন দেখায় মামুন ও মোস্তাক। এক পর্যায়ে ছয় লাখ টাকায় ইতালি যাওয়ার জন্য ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে তাদের মধ্যে চুক্তি হয়।
এরপর ১১ ডিসেম্বর আবদুল্লাহ আল মামুনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১ লাখ ও ১৭ ডিসেম্বর আরও ১ লাখ টাকা পাঠানো হয়। পাশাপাশি নগদ আরও ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এরপর তারা আরিফকে প্রথমে মিয়ানমারে নিয়ে পরে ইতালি পাঠানোর কথা বলে ১১ ডিসেম্বর বাড়ি থেকে নিয়ে যায়।
মিয়ানমারে নেওয়ার পর তারা আরিফকে বন্দি করে নির্যাতন করতে থাকে। পরবর্তীতে অপহরণকারীরা অজ্ঞাত মোবাইলফোন নম্বর থেকে কল দিয়ে আরিফের মাধ্যমেই তার পরিবারকে জানায়, ১ লাখ টাকা পাঠালে তাকে মুক্তি দেওয়া হবে। এরপর ১ জানুয়ারি মামুনের ইসলামী ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ১ লাখ টাকা পাঠানো হয়। কিন্তু তারা আরিফকে মুক্তি দেয়নি।
এরপর আরও ৪ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে চক্রের সদস্যরা। টাকা না দিলে আরিফকে হত্যার হুমকি দেয় তারা। পরে ৫ জানুয়ারি তাদের দেওয়া একাধিক বিকাশ নম্বরে ৪ লাখ টাকা পাঠানো হয়। কিন্তু টাকা পাওয়ার পর অভিযুক্তরা তাদের সব মোবাইলফোন নম্বর বন্ধ করে রাখে।
একপর্যায়ে গত ১৮ জানুয়ারি আরিফের স্ত্রী সুলতানা বেগম সার্বিক বিষয় উল্লেখ করে কালীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর ২৬ জানুয়ারি ‘মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন-২০১২’ এর ৭/৮/১০ (১) ধারায় প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে নিয়ে আটক করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে মামলা করেন।
মামলার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, এ ঘটনায় জড়িতরা আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য।
তদন্তের একপর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় জানা যায়, আসামি মোস্তাক কক্সবাজারে অবস্থান করছে। পরে কক্সবাজারে অভিযান চালিয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি মোস্তাককে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ২১ ফেব্রুয়ারি রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে মানবপাচারকারী চক্রের আরও তিন সদস্যকে কক্সবাজার ও টেকনাফ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।