স্বেচ্ছায় লকডাউনে পাঁচ গ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠী
পাহাড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে প্রাচীন পদ্ধতিতে বান্দরবানের পাঁচটি গ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীরা স্বেচ্ছায় লকডাউনে রয়েছে। এ সময় বাইরের লোকজনের প্রবেশ এবং প্রয়োজন ছাড়া পাড়ার কেউ বাইরে যেতে পারবে না। এ ছাড়া তারা যাওয়া-আসা ঠেকাতে বাঁশের গেইট দিয়ে চলাচলের রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছে।
প্রাচীন পদ্ধতি অনুসরণ করে নেওয়া উদ্যোগটি আধুনিক যুগের মহামারি করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে কার্যকর হিসেবে দেখছে অনেকে। ঘটনাটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে বান্দরবানের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে।
আজ সোমবার বান্দরবান সদরের চিম্বুক পাহাড়ের অদূরে চারটি পাহাড়ি গ্রামের জনগোষ্ঠীরা চতুর্থ দিনের মতো লকডাউনে সময় পার করছে।
পাড়াগুলো হচ্ছে রাংলাই ম্রোপাড়া, মধ্যমপাড়া, সিংচ্যংপাড়া, ম্রলং ম্রোপাড়া এবং লামা সদরের ছাগলখাইয়া মংক্যচিং হেডম্যানপাড়া।
মহামারি করোনাভাইরাসের কথা শুনে গত ২৭ মার্চ থেকে প্রাচীন প্রথা অনুসারে ওই পাঁচ গ্রামের অধিবাসীরা স্বেচ্ছায় লকডাউনে যায়।
মহামারি ঠেকাতে পাহাড়ের জনগোষ্ঠীরা আদিযুগেও এমন পদ্ধতি অনুসরণ করেছে দাবি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের।
রাংলাই ম্রোপাড়ার বাসিন্দা প্যালে ম্রো এবং মধ্যমপাড়ার বাসিন্দা ইয়ংরে ম্রো বলেন, মহামারি ঠেকাতে পাড়া বন্ধের প্রথাটি তাদের দীর্ঘদিনের পুরোনো। ম্রো ভাষায় এই পদ্ধতিকে বলা হয় ‘খাসুর’ করে রাখা। সরকারি ভাষায় ‘লকডাউন’ বলা হচ্ছে। পাড়ার কেউ বাইরে গেলে তাঁকে বাইরেই অবস্থান করতে হবে। তাঁকে পাড়ার ভেতর আসতে দেওয়া হয় না। যত দিন না এটি খোলা হয়।
তারা আরো জানায়, বর্তমানে করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে এই খাসুর বানানো হয়েছে সবাই মিলে। যাতে করোনাভাইরাস থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে। যত দিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হচ্ছে, তত দিন বন্ধ রাখা হবে পাড়াগুলো।
রেংটন ম্রো দাবি করেন, পাহাড়ি গ্রামের মানুষরা দরিদ্র ও শ্রমজীবী। যেহেতু বর্তমানে তারা কর্মহীন সেক্ষেত্রে সরকারের উচিত অসহায় এই পাহাড়বাসীর দিকে নজর দেওয়া। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ দুই বেলা খেয়ে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করা।
এদিকে, স্বেচ্ছায় লকডাউনে যাওয়া পাহাড়ি গ্রামগুলো পরিদর্শনে যান বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লাসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। স্বেচ্ছায় লকডাউনে থাকা পাড়াগুলোর মানুষদের সরকারি সহায়তা পৌঁছে দেয় পার্বত্য জেলা পরিষদ।
এ বিষয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার মানুষদের ঘরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছে। সারা দেশ লকডাউন করা হয়েছে। কিন্তু পাহাড়ি গ্রামের মানুষরা স্বেচ্ছায় লকডাউন করে পাড়া বন্ধ করে দিয়েছে। এটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। লকডাউনে থাকা পাড়াগুলোর জনগোষ্ঠীরা যাতে খাবারে কষ্ট না পায় সেজন্য পরিষদের পক্ষ থেকে চাল, ডাল, লবণসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।’