স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস আজ

বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে ‘স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস’ বলে একটি দিন বিদ্যমান রয়েছে। আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি সেই ‘স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস’।
লেফটেনেন্ট জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নয় বছরের শাসনকালে ১৯৮২ সালে তাঁর শিক্ষামন্ত্রী ড. মজিদ খান শিক্ষানীতি ঘোষণা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন খর্ব ও রেজাল্ট খারাপ হলেও যারা ৫০ শতাংশ শিক্ষার ব্যয়ভার দিতে সমর্থ, তাদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয় এতে। এই নীতিতে দরিদ্রেরা উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হতে পারে বলে ছাত্ররা এর প্রবল বিরোধিতা করে। কার্যত এর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন শুরু করে।
ওই বছর ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের বিষয়ে একমত হয় ছাত্রসংগঠগুলো। এর ধারাবাহিকতায় পরের বছর ’৮৩-এর ১৪ ফেব্রুয়ারি ওই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে সচিবালয়ে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করে শিক্ষার্থীরা। এ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ মজিদ খানের ওই কুখ্যাত শিক্ষানীতি প্রত্যাহার, বন্দি মুক্তি, গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া এবং গণমুখী, বৈজ্ঞানিক ও অসাম্প্রদায়িক শিক্ষানীতির দাবিতে ছাত্র জমায়েত ডাকে। ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের ডাকা ওই সমাবেশে পুলিশ গুলি করলে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। শহীদ হন জাফর, জয়নাল, দীপালি সাহাসহ অনেকেই। পরে সারা দেশেই এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। চট্টগ্রামসহ দেশের অপরাপর স্থানেও হতাহতের ঘটনা ঘটায়।
সেদিন থেকেই ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ‘স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে বলা হয়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ সারা দেশেই ঘটেছে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ও গুমের ঘটনা। প্রতিবাদী ছাত্র-শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী এমনকি সাধারণ মানুষকেও জেলে পুরে নির্যাতন করতে থাকে এরশাদের সাজানো সরকার। এমন আন্দোলন-সংগ্রামের পথ বেয়ে ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর নূর হোসেনকে হত্যা করে এরশাদের পুলিশ বাহিনী। এবং ১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর এরশাদের সন্ত্রাসী বাহিনী গুলি করে হত্যা করে ডা. মিলনকে। এতেও শেষ রক্ষা হয় না এরশাদের।
অবশেষে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পতন হয় এরশাদের।
স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস পালন
১৯৮৩ সালে সামরিক স্বৈরাচার এরশাদের গণবিরোধী শিক্ষানীতি প্রত্যাহার, দমননীতি বন্ধের দাবি এবং গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের বিক্ষোভ মিছিল ও শিক্ষাভবন ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশ গুলি চালায়। নিহত হন জাফর, জয়নাল, দীপালী সাহা, কাঞ্চনসহ আরো অনেকে। প্রতিরোধের এই দিনে একাধিক ছাত্র সংগঠনের উদ্যোগে আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি শহীদদের স্মরণে শিক্ষা অধিকার চত্বরে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
পুস্পস্তবক অর্পণ শেষে বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইকবাল কবীরের বক্তব্যের মাধ্যমে ছাত্র সমাজের প্রতি স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবসের চেতনা, ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে কর্মসূচি সমাপ্ত করা হয়।