সড়কে বেড়েছে জনসমাগম ও যান চলাচল
দেশজুড়ে করোনা সংক্রমণের হার বেড়েই চলেছে, বাড়ছে মৃত্যু। এমন পরিস্থিতিতে সরকারঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের পঞ্চম দিন আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সড়কে বেড়েছে লোকজনের চলাচল। বেড়েছে রিকশা, মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়ি। যদিও বিধিনিষেধের তৃতীয় দিন থেকেই সড়কে মানুষের উপস্থিতি বাড়তে শুরু করেছে। তবে, মানুষ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মামলা ও জরিমানা দেওয়ার হার।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, কলাবাগান, ধানমণ্ডি-৩২, সায়েন্সল্যাব, মিরপুর রোড, শাহবাগ, আসাদ গেট, বিজয় স্মরণি, তেজগাঁও, মৎস্য ভবন এলাকায় ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সড়কে দেখা যায়, হেঁটে, মোটরসাইকেলে, বাইসাইকেলে ও ব্যক্তিগত গাড়িতে করে বাইরে বের হয়েছে মানুষ। তবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে বাইরে আসা মানুষদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। যারা অকারণে বাইরে বের হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যদিও চেকপোস্টগুলোতে অন্যান্য দিনের চেয়ে ঢিলেঢালাভাব দেখা গেছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারার পাশের চেকপোস্টে দুপুর ১টার দিকে কোনো পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়নি। মানুষ কোনোরকম জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়া চলাচল করতে পারছে।
এই চেকপোস্টে নাদির আলী নামের এক সাইকেলচালকের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ‘আপনি বাইরে এসেছেন কেন?’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘বাসায় থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। এ ছাড়া কারওয়ান বাজারে একটু কাজ ছিল, মিটাতে এলাম।’
এদিকে রাজধানীতে কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে পুলিশ টহল দিচ্ছে। তারা চেকপোস্ট বসিয়ে গাড়ি থামিয়ে বাইরে আসার কারণ জানতে চাইছে। ঢাকা জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রমও অব্যাহত আছে। এ ছাড়া পুলিশের পাশাপাশি রাজধানীতে সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে তৎপর রয়েছেন।
এদিকে, অন্যান্য দিনের চেয়ে আজ সড়কে যানবাহন বেশি কেন—এমন প্রশ্নে সড়কে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, যারা বাইরে বের হচ্ছে, তারা প্রয়োজনীয় কারণ দেখিয়েই বের হচ্ছে। সেক্ষেত্রে তাদের বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না। অন্যদিকে, কিছু কিছু অফিস খোলা রয়েছে। ফলে সড়কে মানুষের চাপ কিছুটা বেড়েছে।
তেজগাঁও ট্রাফিক জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) শেখ মোহাম্মদ শামীম বলেন, ‘অন্যান্য দিনের চেয়ে রিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ বেড়েছে। আজ সাইকেলে করেও অনেক মানুষকে বাইরে বের হতে দেখা গেছে। আমরা সড়কে আছি, বাইরে বের হওয়া মানুষদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি। বাইরে বের হওয়া বেশিরভাগই যৌক্তিক কারণ দেখাচ্ছেন। আর যারা যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারছেন না, আমরা তাঁদের মামলা দিচ্ছি।’
এদিকে বিধিনিষেধের মধ্যেও সীমিত আকারে ব্যাংক খোলা থাকায় মানুষের যাতায়াত বেড়েছে ব্যাংকপাড়া খ্যাত রাজধানীর মতিঝিলে। মতিঝিল ট্রাফিক জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার তারেক আহমেদ বলেন, ‘ব্যাংক ও আর্থিকপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় সড়কে চাপ রয়েছে। যারা বাইরে ঘোরাফেরা করছেন, তাঁদের বেশিরভাগই আর্থিকপ্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। ফলে তাঁরা বাইরে থাকলেও আমরা কিছু বলতে পারছি না। তবে আমরা মাঠে রয়েছি, কাজ করছি। করোনা নিয়ন্ত্রণে সড়কে যা যা করা দরকার, চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
নাজমুল হাসান একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি বাইরে বের হয়েছেন অফিসের কাজে। তবে বাসা থেকে তড়িঘড়ি করে বের হতে গিয়ে তিনি মোটরসাইকেলের কাগজপত্র ভুলে রেখে এসেছেন বলে দাবি করছেন। তাঁকে রাজধানীর রাসেল স্কয়ারে বসানো পুলিশ চেকপোস্টে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এক হাজার ২০০ টাকার একটি মামলা দেওয়া হয়।
রাসেল স্কয়ারে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. রফিক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মানুষকে এতো সচেতন করার চেষ্টা করছি, কিন্তু লাভ হচ্ছে না। ফলে নিয়ম অনুযায়ী আমি আমার দায়িত্ব পালন করার জন্য মামলা দিয়েছি। কাজগপত্র ছাড়া বের হলে তো মামলা দেবই। সঙ্গে অকারণে বের হলেও মামলা দেব। আমাদের তেমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’