হঠকারী সিদ্ধান্ত বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে: ড্যাব
করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য নিয়োজিত রাজধানী উত্তরায় অবস্থিত কুয়েত বাংলাদেশে মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের ছয়জন চিকিৎসককে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ ও মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মো. আবদুস সালাম।
অবিলম্বে শাস্তিমূলক আদেশটি বাতিলের দাবি জানিয়ে আজ রোববার এক বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, ‘মনে রাখতে হবে চিকিৎসকেরও পরিবার আছে, একজন চিকিৎসকও একজন স্বামী বা স্ত্রী, কারো পিতা বা মাতা। তাদেরও রয়েছে পিতামাতা, আত্মীয়-পরিজন। এই সবকিছু উপেক্ষা করেই এই দুঃসময়ে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হয়। সুতরাং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এইসব বিবেচনায় নেওয়া সমীচীন ছিল।’
ড্যাবের শীর্ষ দুই নেতা বলেন, ‘দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে বিশ্ব মহামারি করোনাভাইরাসের ছোবল থেকে বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষার জন্য সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে যারা নিরলসভাবে কাজ করছেন, তাদের ব্যাপারে পূর্বের মতোই তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত নিলে যে তা ভুল হয় এবং এই দুঃসময়ের সৈনিকদের প্রতি অবিচার করা হয় এবং তাদের এই আত্মত্যাগের প্রতি এক ধরনের অসম্মান প্রদর্শন করা হয় এবং পরোক্ষভাবে তাদেরকে নিরুৎসাহিত করা হয় তা আবারো প্রমাণিত হলো। চিকিৎসকদের আত্মপক্ষ সমর্থনের নিয়মানুগ সময় না দিয়ে সাময়িক বরখাস্ত করা চাকরিবিধি অনুযায়ী কতটা যৌক্তিক এই প্রশ্ন চলে আসে। কেননা বরখাস্তকৃত চিকিৎসকদের তালিকাটি ভালোভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে ছয়জন চিকিৎসকের মধ্যে চারজনই বেশ অনেকদিন আগে থেকেই যোগদান পরবর্তী তারিখ খেকে অনুপস্থিত এবং দুজন করোনা রোগীর চিকিৎসার ব্যপারে অনীহা দেখিয়েছে। অথচ শেষোক্ত একজন মিডিয়ার মাধ্যমে জানিয়েছেন যে তিনি করোনা রোগীর চিকিৎসা পরবর্তী ১৪ দিনের বাধ্যগত আইসোলেশনে কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত হোটেলে অবস্থান করেছেন। বরখাস্তের সংবাদটি সেই চিকিৎসকের জন্য কতখানি বেদনাদায়ক এবং সামাজিকভাবে তারা এই সম্মানহানির জবাব কে দেবে?
এছাড়া যারা যোগদানের পর থেকে অনুপস্থিত তাদের নানাবিধ কারণ থাকতে পারে, কিন্তু সময়মতো জবাবদিহি না করে এখন করোনা চিকিৎসার সঙ্গে এটিকে জড়িয়ে সামাজিকভাবে চিকিৎসকদের হেয় করা এবং দুঃসময়ে তাদেরকে জনগণের মুখোমুখি করে কর্তৃপক্ষ এক ধরনের দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে। অথচ এই মুহূর্তে করোনা প্রতিরোধ ও করোনাক্রান্ত রোগীদের এবং অন্যান্য রোগীদের যথাযথ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রকৃত ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) প্রদানসহ তাদেরকে আস্থায় এনে কাজে উৎসাহ প্রদান করা সবার কর্তব্য।’
ড্যাবের নেতৃদ্বয় বলেন, চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এই ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা মাঠপর্যায়ে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। এমতাবস্থায় ড্যাব অনতিবিলম্বে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নেওয়া শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আদেশটি বাতিলের জোর দাবি জানিয়েছে। এই মুহূর্তে বিভেদ না বাড়িয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে এই মহাসমস্যা উত্তরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।