হলি আর্টিজানের রায়ে সন্তুষ্ট বিএনপি জঙ্গিবাদবিরোধী ‘জাতীয় ঐক্য’ চায়
রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলায় ২৩ জনকে হত্যার দায়ে সাত জঙ্গির ফাঁসির আদেশে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে বিএনপি। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে যেন বাংলাদেশে এ ধরনের জঙ্গি হামলা আর না হতে পারে, সে জন্য সরকারের উদ্যোগে সব দলকে সঙ্গে নিয়ে জঙ্গিবাদবিরোধী ‘জাতীয় ঐক্যের’ দাবি জানানো হয়েছে।
আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এগ্রিকালচারিস্ট'স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে এ কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গত বুধবার দুপুরে আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর হলি আর্টিজান মামলার রায় দেন ঢাকার সন্ত্রাস দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। রায়ে মামলার জীবিত আট আসামির মধ্যে সাতজনকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। একজন খালাস পান।
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম রায়ের ব্যাপারে বিএনপির কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি মন্তব্য করে এর সমালোচনা করেন। এর একদিনের মাথায় এ ব্যাপারে বিএনপির পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া এলো।
রায় প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘হলি আর্টিজানের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট এ জন্য যে এ রায়ে ভয়ংকর ও ভয়াবহ হয়ে ওঠা জঙ্গিবাদ, যা মানব সভ্যতাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, তার বিরুদ্ধে একটা রায় হয়েছে। সেই রায়কে আমরা স্বাগত জানিয়েছি।’
মির্জা ফখরুল আশা করেন, ‘এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশে ভবিষ্যতে যাতে না ঘটে, তার জন্য সবাই সচেতন থাকবে।’
‘কিন্তু সমস্যাটা কিন্তু অন্য জায়গায়। এ ঘটনা ঘটানোর সুযোগ থাকে কোথায়? তখনই সুযোগ সৃষ্টি হয়, যখন মানুষ কথা বলতে পারে না, যখন মানুষ তাঁর গণতান্ত্রিক অধিকার হারায়, যখন মানুষ তাঁর ব্যথা-বেদনা, আক্ষেপ ও ক্ষোভ প্রকাশ করতে পারে না। আজকে আওয়ামী লীগ সরকার ১০-১২ বছর ধরে দেশে এই অবস্থাই তৈরি করে রেখেছে।’
বিএনপির মহাসচিব আরো বলেন, ‘গতকাল (আওয়ামী লীগ নেতা) মোহাম্মদ নাসিম সাহেব একটা কথা বলেছেন, কথাটা ঠিক নয়। তিনি বলেছেন, হলি আর্টিজানের যে রায় হয়েছে, সে বিষয়ে আমরা কিছু বলিনি। এটাও ঠিক নয়। হলি আর্টিজানের রায় যেদিন হয়েছে, সেদিন আমাকে কয়েকজন সাংবাদিক ফোন করেছেন। আমি আমাদের প্রতিক্রিয়া সেখানে দিয়েছি।’
২০১৬ সালের ১ জুলাই জঙ্গিরা গুলশানের কূটনৈতিকপাড়ায় ভয়াবহ হামলা চালিয়ে ২২ জনকে হত্যা করে। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল বিদেশি নাগরিক। নব্য জেএমবির নেতৃত্বে এই হামলা চালানো হয় বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই ভয়াবহতম জঙ্গি হামলা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আলোচনার জন্ম দেয়।
হলি আর্টিজান হামলার পর বিএনপিই প্রথম সংবাদ সম্মেলন করেছিল জানিয়ে দলের মহাসচিব বলেন, ‘সেই সংবাদ সম্মেলনে আমরা জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিলাম। সরকারের উচিত হবে, এ মুহূর্তে সব রাজনৈতিক দলকে আহ্বান করে একটা বৈঠকের মাধ্যমে এই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এই জঙ্গিবাদ আমাদের সমস্ত সভ্যতাকে বিনষ্ট করে দিচ্ছে।’
এ সময় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এখন ডিএনএ টেস্ট হয় চাকরি পাওয়ার জন্য! কী সেই টেস্ট? টেস্ট এটুকুই, প্রার্থীর গায়ে বিএনপি ও জাতীয়তাবাদের কোনো গন্ধ আছে কি না।’
এ সময় মিলনায়তনের সবাই হেসে ওঠেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘হাসছেন আপনারা? এ ঘটনাগুলো আপনারা সবাই জানেন। এ জন্য আমাদের সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে। ১৯৭১ সালে আমরা যে চেতনা নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম, সেই চেতনা ছিল গণতন্ত্র। সেই গণতন্ত্রকে এরা (আওয়ামী লীগ) ভাজিডলা করে খেয়ে নিচ্ছে।’ বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করবার সব চক্রান্ত সম্পূর্ণ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক কৃষিবিদ রাশীদুল হাসান হারুনের সভাপতিত্বে সভায় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কবি আবদুল হাই শিকদার, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ বক্তব্য দেন।