হালদায় চলছে ডিম আহরণের উৎসব
দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র জোয়ার-ভাটার নদী হালদায় দ্বিতীয় দফায় ডিম ছাড়া শুরু করেছে মা মাছ। ফলে চলছে ডিম সংগ্রহের উৎসব। আজ বুধবার সকাল ৯টা থেকে নদীর বিভিন্ন স্থানে ডিমের নমুনা দেখা দেয়। বিকেল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মা মাছ ডিম দেওয়া শুরু করে।
এর আগে গত মঙ্গলবার মধ্য রাতে ডিম ছাড়ার নমুনা দেখা যায়। এর পরের দিন মা মাছ নদীতে ডিম ছাড়ে। পরের দিন ২৬ মে দিবাগত রাতে নদীতে ডিম ছাড়ে। দুই দফা নমুনা ডিম ছাড়ার পর যে পরিমাণ ডিম ছেড়েছিল এতে ডিম আহরণকারীরা হতাশ হয়ে পড়ে।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মাদ রহুল আমিন বলেন, ‘আজ বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে নদীতে মা মাছ পুরাদমে ডিম ছাড়তে শুরু করেছে। এবার ডিম ছাড়ার পরিমাণ গতবারের চেয়ে বেশি। সন্ধ্যা পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ কার্যক্রম চলছে।’
রাতে জোয়ারের পর আরও বেশি পরিমাণ ডিম ছাড়বে বলে জানান ইউএনও রহুল আমিন।
গত বছর (২২ মে ২০২০ সালে) হালদা নদীতে রেকর্ড পরিমাণ ডিম ছেড়েছিল। ওই বছর সংগৃহীত ডিমের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৬ হাজার কেজি। কিন্তু এই বছর ২৬ মে রাতে ডিম ছাড়ার পরিমাণ ছিল ছয় হাজার ৫০০ কেজি। যা গত বছরের তুলনায় চার ভাগের এক ভাগ মাত্র। গত বছর সংগৃহীত ডিম থেকে রেনু ফোটানো সময় ঘূর্ণিঝড়ের কারণে নদীতে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ে বেশ কিছু ডিম নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ডিম কম পাওয়ায় রেনু উৎপাদন ও কম হয়েছিল। ফলে এবার প্রতিকেজি রেনু গড়পরতা হিসাবে এক লাখ ৪৫ হাজার টাকা দামে বিক্রি হয়েছিল। গত রোববার ও বুধবারে নদীতে পাওয়া ডিম থেকে উৎপাদিত রেনু বিক্রি শেষ হয়েছে। রেনু বিক্রি শেষ হওয়ার তিন দিন পর মাছ পুনরায় নদীতে দ্বিতীয় দফা ডিম ছাড়ে।
এবারে ছাড়া ডিমের পরিমাণ পূর্বে ছাড়া ডিম থেকে বেশি বলে জানিয়েছেন ডিম আহরনকারীরা।
আজ সন্ধ্যা পৌনে ৮টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ডিম ছাড়া অব্যাহত ছিল বলে ও জানিয়েছেন ডিম সংগ্রকারীরা।
নদীর সত্তারঘাট সংলগ্ন এলাকা, অংকুরীঘোনা, গড়দুয়ারা নয়াহাট, পাতাইজ্জ্যারঢেক, কাকতিয়ার চড়, আজিমারঘাট, নাপিতারঘাট, কেরামতলীর টেক, আমতুয়া, মাছুয়াঘোনা, সুইসগেইট, ঝোড়ার মুখ, বাড়িয়াঘোনা, রামদাসমুন্সিরহাট প্রভৃতি স্থানে ডিম ছেড়েছে বলে ও উল্লেখ করেন ডিম আহরণকারীরা।
নদীতে ডিম ছাড়ার আধিক্য দেখে ডিম আহরণকারীদের মধ্যে উৎফুল্ল দেখা গেছে।
গড়দুয়ারা নয়াহাট এলাকার ডিম সংগ্রহকারী মো. কাদের জানান, তিনি গতকাল বুধবার একটি নৌকায় পাঁচ বালতি ডিম পেয়েছেন। যা গত ২৬ মে আহরিত ডিম থেকে প্রায় পাঁচগুণ বেশি।
এছাড়া মধ্যম মাদার্শার ডিম সংগ্রহকারী আশু বড়ুয়া মোটামুটি ভালো ডিম পেয়েছে বলে জানান।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আইডিএফের কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেন গতকালের ছাড়া ডিম আগের ছাড়ার চেয়ে বেশি বলে জানিয়েছেন।
হাটহাজারী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাজমুন হুদা রনি জানান, নদীর সত্তারঘাট থেকে শুরু করে রামদাসমুন্সিরহাট পর্যন্ত নদীর বিভিন্ন স্থানে মাছ ডিম ছেড়েছে। ডিম আহরণের পরিমাণ ও সন্তোষজনক।