৩ কিশোর হত্যা : দু-একদিনের মধ্যেই রিপোর্ট দেবে সমাজসেবার তদন্ত কমিটি
যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে তিন কিশোর নিহতের ঘটনায় সমাজসেবা অধিদপ্তর গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের কার্যক্রম শেষ করেছে। দু-একদিনের মধ্যে ওই কমিটি অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে বলে জানায়।
দুই সদস্যের এ তদন্ত কমিটির প্রধান সমাজসেবা অধিদপ্তর ঢাকার পরিচালক সৈয়দ মো. নূরুল বশির জানান, আজ সোমবার তাঁরা ঢাকায় ফিরবেন এবং দু-একদিনের মধ্যেই মহাপরিচালকের কাছে রিপোর্ট জমা দিতে পারবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে মো. নূরুল বশির জানান, তাঁরা মূলত বিভাগীয় তদন্ত বা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এখানে তাঁরা দায়িত্বরতদের কারো অবহেলা, গাফিলতি ছিল কিনা, বিষয়টি এড়ানো যেত কিনা, এসব বিষয় খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন।
নূরুল বশির জানান, ভবিষ্যতে যাতে এ রকম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আর না ঘটে, সে ব্যাপারে কিছু সুপারিশমালাও তদন্ত রিপোর্টে তুলে ধরবেন তাঁরা।
গত বৃহস্পতিবার যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে তিন কিশোর নিহত হয়। ঘটনার ছয় ঘণ্টা পর কেন্দ্রের কর্মকর্তারা দাবি করেছিলেন, দুই দল কিশোরের মধ্যে সংঘর্ষে তিন কিশোর নিহত হয়েছে। এ সময় আহত হয় আরো কয়েকজন। যদিও পরে রাতে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কথিত সংঘর্ষের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে জানায়, কিশোরদের একতরফা পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কিশোরদের জবানিতেও উঠে এসেছে দিনভর ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা। তারা অভিযোগ করেছে, কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
পরে নিহত কিশোর রাব্বির বাবা রোকা মিয়া বাদী হয়ে যশোর কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের অজ্ঞাত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আসামি করা হয়। পুলিশ এ মামলায় কেন্দ্রের সহকারী পরিচালকসহ পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আটক করে।
এ ঘটনায় নিহতরা হলো খুলনার দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা পশ্চিম সেনপাড়ার রোকা মিয়ার ছেলে পারভেজ হাসান রাব্বি (১৮), বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার মহিপুর গ্রামের নুরুল ইসলাম নুরুর ছেলে রাসেল সুজন (১৮) ও বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার তালিপপুর পূর্বপাড়ার নানু প্রামাণিকের ছেলে নাঈম হোসেন (১৭)।
কিশোরদের ভাষ্যমতে, এ ঘটনার সূত্রপাত গত ৩ আগস্ট। এদিন কেন্দ্রের প্রধান নিরাপত্তাকর্মী নূর ইসলাম কয়েকজন কিশোরকে তার মাথার চুল কেটে দিতে বলেন। এ প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ওই নিরাপত্তাকর্মী পরিচালকের কাছে কিশোরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন যে তারা মাদকাসক্ত। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বন্দিদের কয়েকজন নূর ইসলামকে মারধর করে। তার পরই তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন নেমে আসে।
যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রটি জেলা শহর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরের শহরতলি পুলেরহাট এলাকায় অবস্থিত। এখানে প্রায় ২৮০ কিশোর বন্দি রয়েছে।