৪০ মণের ‘জনসিনা’, ৩৫ মণের ‘কালা মানিক’ কত দামে বিক্রি হবে
রাজধানীর গাবতলীর পশুর হাটে এসেছে ‘জনসিনা’ আর ‘কালা মানিক’। পশু দুটির মালিকের দাবি, জনসিনার ওজন ৪০ মণ আর কালা মানিকের ওজন ৩৫ মণ। এ দুটি পশুই এ বাজারের সবচেয়ে বড়।
কিন্তু এবার পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, ছোট ও মাঝারি গরুর ক্রেতা বেশি। বড় গরুর কাছে ভিড় বেশি হলেও মূলত বিক্রি হচ্ছে ছোট ও মাঝারি পশু। ফলে বড় পশুর মালিকরা একটু বেকায়দায় আছেন।
জনসিনার মালিক কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার মো. বোরহান। তিনি মূলত একজন কৃষক। কিন্তু কোরবানির জন্য শখের বসে পারিবারিক আবহেই পশু লালন-পালন করেন। বোরহানের দাবি, গরুটি ফ্রিজিয়ান জাতের। ওজন ৪০ মণ। উচ্চতা পাঁচ ফুট ১০ ইঞ্চি। লম্বায় ১০ ফুট।
রোবহান, জনসিনার দাম হাকাচ্ছেন ২০ লাখ টাকা। তবে তিনি শুরুতে ৩০ লাখের উপরে দাম হাঁকেন। এত দামে সাড়া না পেয়ে ২০ লাখে নেমেছেন। তবে তিনি স্পষ্টভাবেই জানালেন, ১৪ লাখের কাছাকাছি দাম পেলেন জনসিনাকে ছেড়ে দেবেন।
অপরদিকে ‘কালা মানিকের’ মালিক নজরুল ইসলাম দাবি করেন, গরুটির ওজন ৩৫ মণ। তিনি ১৫ লাখ টাকা দাম হাঁকালেও আট-নয় টাকা হলে বিক্রি করে দেবেন বলে জানান।
আজ রোববার বিকেলে গাবতলীর পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, পুরোদমে বেচাকেনার পাশাপাশি এখনও দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যবসায়ীরা এখানে গরু নিয়ে আসছেন। ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে মুখরিত এই হাট। এই করোনার সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি প্রায় উপেক্ষিতই থাকছে। হাটের ইজারাদার বা সংশ্লিষ্ট লোকজনকে এ ব্যাপারে উদাসীনই মনে হয়েছে। সবাই পশু কেনা আর দেখা নিয়েই ব্যস্ত!
হাটে ‘জনসিনা’ আর ‘কালা মানিক’ পাশাপাশি। বিশাল বপুর দুটি গরুই দীর্ঘযাত্রায় ক্লান্ত। মাঝে মাঝেই তারা ঘুমিয়ে পড়ে। মালিক কখনও গরুর শরীরে পানি ঢালেন, কখনও আবার মাথায় হাত বুলান। কখনও আবার শরীর ঝেড়েমুছে দেন।
বোরহান ও নজরুল এনটিভি অনলাইনে বলছিলেন, করোনার কারণে এবার ক্রেতা কম। এখানে পশু নিয়ে এসে তারা খুশি নন। তাদের দাবি, ক্রেতাদের দৃষ্টি ছোট ও মাঝারি গরু দিকে।
বড় গরু কেনার জন্যই গাবতলী হাটে এসেছেন ব্যবসায়ী আজলম হক। তিনি ‘জনসিনা’ আর ‘কালা মানিকের’ পাশে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, ‘গরুর ওজনের হিসেবে দাম অনেক বেশি বলছেন বিক্রেতারা। কয়েকটি গরু দেখলাম। সবখানেই একই অবস্থা। আমার বাজেট সাত লাখ টাকা। কিন্তু দরদামের সঙ্গে গরুর ওজনে মিলছে না।’ একই ধরনের দাবি করেছেন আরও কয়েকজন ক্রেতা।
কত দাম উঠলে ‘জনসিনা’ বিক্রি করবেন- এমন প্রশ্নে কিছুক্ষণ ভেবে মো. বোরহান প্রতিবেদককে বলেন, ‘প্রথমে তো ৩৫ লাখ টাকা দাম বলেছিলাম। বাজার খারাপ হওয়ায় সেখান থেকে কমতে কমতে ২০ লাখ টাকায় এসেছি। এখন তো মনে হচ্ছে, এই দামও পাব না। তবে ১৪ লাখের নিচে হলে বিক্রি করব না। কারণ, তাতে খরচ উঠবে না।’
বোরহান আরও বলেন, ‘আমার এক বন্ধু আবেগে গরুটির নাম রেখেছেন কিশোরগঞ্জের জনসিনা। তারপর থেকে সবাই জনসিনা বলেই ডাকে। গরুটির পেছনে প্রতিদিন ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা খরচ করি আমি। চার বছর ধরে গরুটিকে লালন-পালন করছি। চারটি দাঁত হয়েছে গরুর। খুব আদর করে পালন করেছি জনসিনাকে।’
‘কালা মানিকের’ মালিক নজরুলের কাছে সবশেষ দাম জানতে চাইলে বলেন, ‘আট লাখের নিচে আর নামা যাবে না কোনোভাবে।’
এদিকে করোনাকালে গরুর হাট বসা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন করোনারোধে গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি। বিকল্প হিসেবে অনলাইনেও পশু বিক্রি করছেন অনেক খামারি। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতন ক্রেতারাও সরাসরি হাটের চাইতে অনলাইনে পশু কিনতেই আগ্রহী।
জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেছিলেন, ‘গরুর হাটে কোনোভাবেই স্বাস্থ্যবিধি মানিয়ে চলানো সম্ভব নয়। এই করোনা সংক্রমণের সর্বোচ্চ হারের সময় এটা সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত। এতে করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে।’
গাবতলীর গরুর হাটে চিত্র দেখে সেটাই মনে হল। হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে কম দেখা গেছে। অধিকাংশ বিক্রেতার মুখে মাস্ক ছিল না। অনেক ক্রেতাও ছিলেন উদাসীন।