হাসপাতালে না পাঠিয়ে ওসি বললেন, ধর্ষিত হয়নি
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/05/27/photo-1432734747.jpg)
মেয়েটি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। থানায় গিয়েছিল অভিযোগ নিয়ে, স্থানীয় এক বখাটে তাকে ধর্ষণ করেছে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কিশোরীর সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বললেন। কিশোরীকে হাসপাতালে না পাঠিয়ে তার বাবা ও মাকে ডেকে বললেন, ‘আপনার মেয়ে মিথ্যা কথা বলছে, কাউকে ফাঁসানোর জন্য আপনারা এ কাজ করছেন।’
ঘটনাটি ঘটেছে শরীয়তপুরে গোসাইরহাট উপজেলায়। মেয়েটির পরিবার ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানায়, প্রায় দুই বছর ধরে একই এলাকার রিজভী খান ওই মেয়েটিকে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করত। রিজভী চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। রিজভীর উত্ত্যক্তের কারণে মেয়েটির পরিবার এ বছর স্কুল পরিবর্তন করে অন্য স্কুলে ভর্তি করায়। কিন্তু এরপরেও রিজভী তাকে সুযোগ পেলেই উত্ত্যক্ত করতো। এ নিয়ে মেয়ের পরিবার রিজভীর পরিবারের কাছে একাধিকবার অভিযোগ দিলেও কোনো ফল হয়নি।
মেয়েটির বাবা বলেন, গত ২৪ মে রোববার তিনি দুই মেয়েকে রেখে এশার নামাজ পড়ার জন্য বের হন। কিন্তু ফিরে এসে দেখেন বড় মেয়ে ঘুমিয়ে আছে, কিন্তু ছোট মেয়েটি নেই। এরপর আশপাশে সারা রাত খোঁজাখুঁজি করেও মেয়েকে পাননি। পরের দিন সকাল ১০টার দিকে মেয়েটিকে একই গ্রামে একটি পরিত্যক্ত ঘরে আটক অবস্থায় পাওয়া যায়। সেখান থেকে উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে এলে মেয়েটি জানায়, তাঁকে সারা রাত মুখ ও হাত বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে। দুজনের পাহারায় রিজভী তার ওপর পাশবিক নির্যাতন করেছে।
ঘটনার শিকার মেয়েটি জানায়, রিজভী দীর্ঘদিন ধরে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছে। রাজি না হওয়ায় কিছুদিন আগে রিজভী তাকে বিপদে ফেলার হুমকি দেয়। ঘটনার দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে রিজভী, তার বন্ধু রাজন ও আরো দুজন তাকে মুখ চেপে ধরে রাজনদের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে রিজভী তার ওপর পাশবিক নির্যাতন করে।
মেয়েটির বাবা বলেন, ‘সব জানার পর মেয়েটিকে নিয়ে আমরা গোসাইরহাট থানায় যাই। পুলিশ আমার মেয়েটিকে আলাদা রুমে নিয়ে অনেকক্ষণ কথা বলে। পরে আমাদের বলে আপনার মেয়ে মিথ্যা কথা বলছে। আপনারা কাউকে ফাঁসানোর জন্য এই অভিযোগ করছেন। আপনারা যান, আমরা তদন্ত করে দেখব।’
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, ঘটনা তদন্তের জন্য থানার উপপরিদর্শক ফারুক হোসেনকে ওই গ্রামে পাঠানো হয়। কিন্তু ফারুক হোসেন বিস্তারিত খোঁজখবর না নিয়েই রিজভীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে ফিরে আসেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) একজন সদস্য বলেন, পুলিশের উচিত ছিল মেয়েটিকে শারীরিক পরীক্ষার জন্য দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো। সেটা না করে তারা যে আচরণ করেছে, তাতে মনে হয় পুলিশ অভিযুক্তদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মেয়েটিকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে মঙ্গলবার রাতে ওই মেয়েটির ভাই বাদী হয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করলে পুলিশ অভিযোগটি গ্রহণ করে মামলা রুজু করে।
এ ব্যাপারে গোসাইরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘মেয়েটির কথাবার্তা অসংলগ্ন হওয়ায় মামলা না নিয়ে থানার উপপরিদর্শক ফারুক হোসেনকে তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছিল। তিনি ঘটনার সত্যতা না পাওয়ায় মামলা নেওয়া হয়নি। তবে মঙ্গলবার রাতে মেয়েটির ভাই বাদী হয়ে একটি রিজভী ও রাজনকে আসামি করে মামলা করেছে।’ গোসাইরহাট থানা সূত্রে জানা গেছে মামলার নম্বর ৪৩/৮।
রিজভী ও রাজনের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের কাউকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালিয়েছে।