জাবির সেই ভবন খালি, প্রশাসনের সিলগালা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) একটি ভবনের তৃতীয় তলায় স্থান বরাদ্দের দাবিতে তিনটি বিভাগের অব্যাহত আন্দোলনের মধ্যে ভবনটির মূল ফটকে তালা দিয়ে সিলগালা করে দিয়েছে প্রশাসন।
গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভা শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলসংলগ্ন নতুন বিজ্ঞান ভবনটি ‘ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান, ইলেকট্রনিকস ও কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং পরিবেশবিজ্ঞান ভবন’ নামেও পরিচিত। এ ভবনের নবনির্মিত তৃতীয় তলায় স্থান বরাদ্দের দাবিতে গত ৫ এপ্রিল থেকে প্রায় এক মাস ২০ দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি বিভাগ।
এই দাবিতে মানববন্ধন, মিছিল, অনশন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন বিভাগ তিনটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। নানা চেষ্টায়ও সংকট সমাধানে ব্যর্থ হয়ে একপ্রকার বাধ্য হয়েই গ্রীষ্মকালীন অবকাশ ও রমজানের ছুটির নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে ‘রেকর্ড’ সংখ্যক টানা ৬১ দিন ছুটি ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এরপরও থামছিল না আন্দোলন। মঙ্গলবার দুপুরে পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের দেওয়া তালা কেটে তা দখলে নেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ভবনের ভেতরে আটকা পড়েন পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চার শিক্ষকসহ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী।
এক পর্যায়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল বিকেলে জরুরি সিন্ডিকেট বৈঠক আহ্বান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। বিকেল সাড়ে ৫টায় তাঁর বাসভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সিন্ডিকেট সভায় ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগ, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের ভবনে অবস্থানকারী সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অবিলম্বে ভবন ত্যাগ করতে নির্দেশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। খালি হওয়ার পর ভবনের সব কক্ষ ও ফটকে তালা লাগিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিলগালা ও পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত ভবনটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সিন্ডিকেট সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিকের সই করা এক ‘অতি জরুরি বিজ্ঞপ্তি’তে এ নির্দেশ জারি করা হয়।
এ ছাড়া গত ৩০ মে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটে আদেশ জারির পরও সংকট বিদ্যমান থাকায় তার কারণ অনুসন্ধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক আবুল খায়েরকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সিন্ডিকেট সদস্য এবং কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ কামরুল আহছান, সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক লুৎফর রহমান ও প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা।
সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুসারে, গতকাল রাত ৯টার দিকে বিবদমান তিন বিভাগের সভাপতিকে ডেকে এক ঘণ্টার মধ্যে ভবনটি সম্পূর্ণ খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান মোল্লা এবং ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল আজিমের নেতৃত্বে ক্যাম্পাসে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে তাঁরা ভবনের সামনে না গিয়ে রসায়ন ভবন এবং পদার্থ বিজ্ঞান ভবনের মাঝে অবস্থান নেন।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির হস্তক্ষেপে রাত সোয়া ১২টার দিকে ভবন থেকে বের হয়ে আসে পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগ। আর তার প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা পর রাত দেড়টার কিছু পরে বের হয়ে আসেন বাকি দুই বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এর পরপরই প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতিতে ভবনের সবকটি গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট শাখা। তবে সে সময় পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, এ ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অমান্য করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কেন না, সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে খালি করা ভবনের সকল কক্ষ ও গেটে তালা লাগিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিলগালা করার কথা। ভবনের সব কক্ষে তালা ঝোলানো তো হয়-ইনি, এ ছাড়া যে তালাগুলো ঝোলানো হয়েছে সেগুলোও সিলগালা করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এ ব্যাপারে রাত পৌনে ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এত তালা কোথায় পাব? সবগুলো গেটে প্রশাসনের তালা লাগানো হয়েছে। যে তালাগুলো ঝোলানো হয়েছে সেগুলো দ্রুতই সিলগালা করে দেওয়া হবে। ’
পরে আজ পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের পক্ষ থেকে ভবনের সবশেষ অবস্থা জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জামাল উদ্দিন এনটিভি অনলাইনকে জানান, সে সময় তাঁদের রেজিস্ট্রার জানান যে আজ বুধবার দুপুরে ভবনটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।