পাট নিয়ে বিপদে সাতক্ষীরার কৃষক
কৃষকদের অভিযোগ, এসব বীজ ভেজাল। রোদ আর বৃষ্টিও কৃষকদের পক্ষে নেই। সব মিলিয়ে পাট চাষ এবার সাতক্ষীরার কৃষকদের গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবুজ সবজিতে উপচে পড়া খেত আর বাবরি দোলানো সোনালি ধানের নাচন দেখে খুশি হওয়া কৃষক ভেবেছিলেন, সোনালি ফসল পাটেও ভরে যাবে গুদাম। কিন্তু বিধি বাম, দুই মাস বয়স হলেও বাড়েনি পাটের চারা। তীব্র তাপদাহ আর খরায় চারা মাটিতে নুয়ে পড়ছে।
চারা থেকে ফুল বেরিয়েছে কোনো কোনো খেতে। কৃষকরা জানিয়েছেন, আগাম ফুল বের হয়ে যাওয়া মানে এর থেকে আর কিছু পাওয়া যাবে না।
তালতলা গ্রামের কৃষক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘পাঁচ বিঘা জমিতে এবারও চাষ করেছি। এর আগে জমিতে হালকা পানিসেচও দিয়েছি। শুরুতে বৃষ্টিও পেয়েছিলাম। যে বীজ বুনেছি, তাও ভালো বলে জানিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এখন খেতের দিকে আর তাকাতে পারছি না। হলুদ হয়ে গেছে চারা। কোনোটির ফুল বেরিয়েছে। আর তাপদাহে পুড়ে যাচ্ছে খেত।’
ইসমাইল জানান, এই পাঁচ বিঘা জমিতে চাষ করতে সার, বীজ ও মজুরি মিলে খরচ পড়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। লাভের মুখ দেখা তো দূরের কথা, এখন আসল টাকা ওঠানোই অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে।
কৃষকরা জানান, এসব পাটবীজ তাঁরা বাজার থেকে কেনেন। কিছু বীজ আসে ভারত থেকে চোরাপথে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক কাজী আবদুল মান্নান জোর দিলেন প্রকৃতির ওপর। তিনি বলেন, ‘চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলায় প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে হেক্টরপ্রতি ১২ বেল হিসাবে প্রায় এক লাখ ৩২ হাজার বেল।’
পাটের জন্য চাই রোদ ও বৃষ্টি প্রয়োজন জানিয়ে আবদুল মান্নান বলেন, ‘মৌসুমের শুরুতেই হালকা বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকরা আশায় বুক বেঁধে পাট চাষ করেছিলেন। কিন্তু এর পর কয়েক মাস ধরে বৃষ্টির দেখা না পাওয়ায় সেই চাষিদের মাথায় হাত উঠেছে।’ তিনি বলেন, ‘এ অবস্থা চলতে থাকলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।’
গত মৌসুমের তুলনায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় এবার পাট চাষ বেশি হয়েছে। এ উপজেলার খানপুর গ্রামের চাষি একরাম আলী জানান, তাঁর ১১ বিঘা জমিতে ব্যয় হয়েছে ৪০ হাজার টাকার বেশি। এ থেকে তিনি বড় অঙ্কের লাভের আশা করেছিলেন। কিন্তু সে গুড়ে বালি। এখন দেনা শোধ দেবেন কী দিয়ে, সেই ভাবনাই তাঁর।
টানা ৩০ বছর তোষা জাতের পাট চাষ করছেন কলারোয়ার চন্দনপুর ইউনিয়নের গয়ড়া গ্রামের কৃষক সাহেব আলী। তিনি বলেন, ‘তাঁর ১৪ বিঘা জমির পাট এবার পুড়ে ছাই হতে বসেছে। এবারের মতো বিপদে পড়িনি কখনো।’ কৃষক দবিরুল ইসলাম বলেন, ‘আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছি।’
কৃষকরা বলছেন, বীজ বপনের পর প্রায় দুই মাস পার হলেও চারাগুলো লম্বা হয়েছে মাত্র দেড় থেকে দুই ফুট। কৃষকদের অভিযোগ, এই দুর্দিনে কৃষি কর্মকর্তাদের কোনো খোঁজই নেই। তাঁরা কৃষকদের কাছে এসে কোনো পরামর্শও দিচ্ছেন না বলে জানালেন।