শিক্ষার্থীদের ‘গরু’ বলায় নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় উত্তাল
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার খন্দকার এহসান হাবিব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গরু আখ্যায়িত করায় ফুঁসে উঠেছেন শিক্ষার্থীরা। এহসান হাবিবের বিচার ও স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে আজ বৃহস্পতিবারও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছিল উত্তাল।
আজ বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিলে নেতৃত্ব দেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আপেল মাহমুদ। মিছিলে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান অনিক, জনসংযোগবিষয়ক সম্পাদক নূরে রাব্বি মুরাদ, উপ-অর্থ সম্পাদক সোহেল মিয়া, ইসিই বিভাগের সভাপতি সানি, সামাজিক অনুষদের সভাপতি মোজাম্মেল হক অনিকসহ বিপুলসংখ্যক ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ ও অবস্থান গ্রহণ করেন। তাঁরা সহকারী রেজিস্ট্রার খন্দকার এহসান হাবিবকে ‘জামায়াত-শিবির’ বলে আখ্যা দিয়ে স্লোগান দেন। পরে ক্যাম্পাসের ভেতরের সড়কে টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেন। খবর পেয়ে পুলিশ আসে ক্যাম্পাসে। পরে শিক্ষার্থীরা ডেপুটি রেজিস্ট্রারের কাছে গিয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি রোববারের মধ্যে এহসান হাবিবের স্থায়ী বহিষ্কার ও বিচার দাবিতে স্মারকলিপি দেন।
এ বিষয়ে ডেপুটি রেজিস্ট্রার ড. মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এ এম শামসুর রহমান। সদস্য হিসেবে আছেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মুশাররাত শবনম, প্রক্টর ড. মো. জাহিদুল কবীর ও রেজিস্ট্রার মো. আমিনুল ইসলাম।
এহসান হাবিব গত ৩১ জানুয়ারি সকাল ৮টা ২৪ মিনিটে তাঁর ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘পাবলিকের অনেক গরু প্রতিদিন আমি আমার বাড়ির মাঠে ঘাস খেতে দেখেছি।’ এরপর ৮টা ৪০ মিনিটে তিনি আরেকটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে লেখেন, ‘বিষয়টা প্রাইভেট পাবলিকের না। বিষয়টা হলো মেধার। যোগ্যতার। আপনি পাবলিকের গরু নেবেন নাকি প্রাইভেটের মেধা নেবেন।’
এই স্ট্যাটাসের পর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ অন্যদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।
উপাচার্যের ছেলের পক্ষে সাফাই গাইতে স্ট্যাটাস!
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ছেলে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা শিক্ষা বিভাগে শিক্ষক প্রার্থী হিসেবে আবেদন করেছেন। তাঁর নিয়োগ নিয়ে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠলে সহকারী রেজিস্ট্রার খন্দকার এহসান হাবিব তাঁর ফেসবুকে ওই স্ট্যাটাস দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা শিক্ষা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বিপ্লব হাসান বলেন, ‘তাঁদের বিভাগ থেকেই অনেক মেধাবী ও যোগ্য শিক্ষার্থী বেরিয়েছেন। তাঁদের বাদ দিয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীকে স্বজনপ্রীতি করে নিয়োগ দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা এটা মানি না। যতক্ষণ পর্যন্ত স্বজনপ্রীতির নিয়োগ বন্ধ না হবে, আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাত আরা অভিযোগ করেন, ‘ভিসি স্যারের ছেলেকে নিয়োগ দেওয়া হবে। সে হচ্ছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ও যোগ্য শিক্ষার্থীকে শিক্ষক নিয়োগ দিলে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। তা ছাড়া আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গরু বলা অপমানজনক।’
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোজাম্মেল হক অনিক অভিযোগ করেন, ‘ভিসি স্যারের ছেলেকে নিয়োগ দেওয়ার পক্ষে সহকারী রেজিস্ট্রার হাবিব জনমত গঠনে তাঁর স্ট্যাটাসে লিখেছেন, পাবলিকের গরু নেবেন, না প্রাইভেটের মেধা নেবেন। এ ছাড়া তিনি প্রধানমন্ত্রীকে নিয়েও কটূক্তিমূলক স্ট্যাটাস দিয়েছেন। আমরা তাঁর স্থায়ী বহিষ্কার ও বিচার দাবি করছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সভাপতি সানি বলেছেন, ‘সহকারী রেজিস্ট্রারকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে আন্দোলন চলছে। গরু বলায় আমরা অপমানিত। আন্দোলন চলছে। বিচার না হলে আমরা মানহানির মামলা করব।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমান অনিক বলেন, ‘স্মারকলিপি দিয়েছি। আগামী রোববার দুপুরের মধ্যে অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে স্থায়ী বহিষ্কার না করলে দুর্বার আন্দোলন শুরু করা হবে।’
জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সহকারী রেজিস্ট্রার খন্দকার এহসান হাবিবের সংশ্লিষ্টতা প্রসঙ্গে ডেপুটি রেজিস্ট্রার ড. মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘ছাত্রজীবনে সে জামাত-শিবির করতে পারে। ছাত্রজীবনে অনেকেই অনেক কিছু করে। তাই বলে পেশাগত কর্মস্থলে এ রকম করার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি তদন্তে ধরা পড়লে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সহকারী রেজিস্ট্রার আজ ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে ডেপুটি রেজিস্ট্রার বলেন, উপাচার্যের নির্দেশে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আগামী পাঁচ কর্মদিবসে তাঁরা রিপোর্ট জমা দেবেন। দোষী হলে সহকারী রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।