হাজার রোহিঙ্গাকে ইউরোপ-আমেরিকায় পাঠাতে চায় জাতিসংঘ
বাংলাদেশ থেকে এক হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং ইউরোপের কিছু দেশে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা বা ইউএনএইচসিআর।
বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইউএনএইচসিআরের বাংলাদেশ প্রধান শিনজি কুবো জানিয়েছেন, এক হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ভিন্ন কোনো দেশে পুনর্বাসনের জন্য তারা বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি চেয়েছেন। কয়েক বছর ধরে এ চেষ্টা হচ্ছে বলে সংস্থাটির প্রধান জানিয়েছেন।
মি: কুবো বলেন, ‘বাংলাদেশের দুটো শরণার্থী ক্যাম্পে প্রায় ৩৪ হাজার নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। সেখান থেকে আমরা এক হাজার ব্যক্তিকে বাছাই করেছি।’
‘কিছু রোহিঙ্গা শরণার্থী আছে যাদের জরুরি চিকিৎসা দরকার যেটা এ দেশে সম্ভব নয়। এ ছাড়া কিছু শরণার্থীর পরিবারের সদস্যদের আগে বিভিন্ন দেশে পুনর্বাসন করা হয়েছে। তারা যাতে তাদের পরিবারের সঙ্গে একত্রিত হতে পারে এবং যাদের চিকিৎসা দরকার তারা যাতে সে সুবিধা পায় সে ভিত্তিতে তাদের বাছাই করা হয়েছে।’
জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার বাংলাদেশ প্রধান জানান, এসব রোহিঙ্গাকে ভিন্ন কোনো দেশে নিয়ে যেতে হলে সেসব দেশের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে হবে। কিন্তু সেসব দেশের সঙ্গে যাতে আলোচনা শুরু করা যায় সে জন্য বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদন নিতে হবে আগে। কারণ বাংলাদেশের সরকারের অনুমতি না থাকলে এসব শরণার্থীরা এদেশ ত্যাগ করতে পারবে না।
তবে রোহিঙ্গাদের ভিন্ন কোনো দেশে পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ এবং অনিশ্চয়তা আছে বলে উল্লেখ করেন মি: কুবো।
এর আগে বিভিন্ন সময় মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৯০০ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকায় পুনর্বাসন করা হয়েছিল। কিন্তু ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার এ পুনর্বাসন প্রক্রিয়া স্থগিত করে।
কিন্তু সম্প্রতি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এবং আমেরিকায় অভিবাসী ও শরণার্থীদের ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশেষ করে এ প্রশ্নে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। এমন প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা মুসলমানদের সেসব দেশে পুনর্বাসন করা কতটা সহজ হবে সেটি নিয়ে প্রশ্ন আছে।
শিনজি কুবো বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে যেসব আলোচনা হচ্ছে সেগুলো নিয়ে আমি অবগত আছি। আমি মনে করি, এসব শরণার্থীদের মানবিক সহায়তার বিষয়গুলো তুলে দায়িত্ব আমাদের। পুনর্বাসন করা সহজ নাকি কঠিন - সে বিষয়টিকে একপাশে সরিয়ে রেখে এর সমাধানের জন্য কাজ করে যাওয়া আমাদের দায়িত্ব।’
মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের ইউরোপ-আমেরিকায় পুনর্বাসনের বিষয়টিকে বাংলাদেশ সরকার সমর্থন করে না। সরকার মনে করে, ভিন্ন কোনো দেশে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করার প্রক্রিয়া চালু থাকলে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসার প্রবণতা অব্যাহত থাকবে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়নের সময় গত চার মাসে প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে বলে বলছে বাংলাদেশ সরকার। এর আগে বিভিন্ন সময় আরো তিন লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে।