মোদির সফরে রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ হয়নি
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কোনো প্রভাব ফেলেনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর। বিবদমান রাজনীতিতে তৈরি করেনি নতুন কোনো মেরুকরণ। তবে বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দল নয়, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্কটাকেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করেছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
urgentPhoto
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ৩৬ ঘণ্টার ঢাকা সফরে তাঁর সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। দুজনই ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন তাঁদের অবস্থান।
লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসকে বিপুল ব্যবধানে হারিয়ে বিজেপি ক্ষমতায় আসার বছরখানেক পর মোদির ঢাকা সফরকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ যাঁরা করছেন, তার ফলাফল শূন্য বলেই মনে করেন সাবেক তত্ত্বাধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান। তিনি বলেন, ‘মোদির সফরের বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ক্ষেত্রে কোনো তাৎপর্য নাই। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি যেভাবে ছিল সেভাবেই আছে। এটা আশা করাও ভুল যে বিদেশি রাষ্ট্রের সহায়তায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে প্রভাবান্বিত করা হবে। এখানে একটাই ব্যতিক্রমী বিষয় আছে, সেটা হলো যে এবার মোদি ছিটমহল সমস্যার সমাধানের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন যেটা ১৯৪৭-এর পরে সমাধান করা যায়নি।’
তবে কোনো বিশেষ দলকে নয়, বাংলাদেশের জনগণকেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন বলে মনে করেন লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ। তিনি বলেন, ‘দেশের সমস্ত মানুষের বন্ধুত্ব যদি ভারত আশা করে তাহলে সব দলের সঙ্গেই তাঁর সম্পর্ক রাখতে হবে। সেটা কিন্তু প্রকাশ পেয়েছে মোদির সবার সঙ্গে কথা বলায়। সুতরাং এটা একটা ইতিবাচক দিক। তবে তাঁদের ব্যক্তিগত, তাঁদের দেশের, রাষ্ট্রের যে স্বার্থ সেই স্বার্থ তো তাঁরা দেখবেনই। আমাদের নেতাদেরও উচিত হলো আমাদের রাষ্ট্রের স্বার্থ দেখা।’
তাঁদের মতে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করবে না ভারত এমনটা আগে থেকেই বলে আসছে প্রতিবেশী দেশটি। তবে আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক রাজনীতিতে শক্তিশালী হচ্ছে ভারতের অবস্থান।
এ বিষয়ে আবুল মকসুদ বলেন, ‘আঞ্চলিক রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব বিস্তারের বিষয়টি নরেন্দ্র মোদির একটা অগ্রাধিকারের বিষয়। তো সেদিক থেকে তিনি চাইবেন এবং বাংলাদেশ আসলেও ভারতের সঙ্গেই আছে। কারণ এত নিকটতম প্রতিবেশী।’
তবে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক উন্নয়ন ছাড়া সার্ক ফলপ্রসূ হবে না বলে মনে করেন আকবর আলি খান। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই ভারত একটি বড় শক্তি। এবং ভারত এ ব্যাপারে নেতৃত্বে থাকবে কিন্তু আঞ্চলিক রাজনীতির ক্ষেত্রে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক উন্নত না হলে পরে সার্কের কাঠামোতে আগানো সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। আর বৈশ্বিক রাজনীতিতে ভারতের যে অবস্থান, এটা ক্রমশ উন্নত হচ্ছে।’
অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সুবিধা আদায়ের চিন্তা না করে বরং প্রতিবেশী দেশ দুটির দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে জনগণের স্বার্থকেই সবার ঊর্ধ্বে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন এই দুই বিশ্লেষক।