মুজাহিদের আপিলের রায় কাল
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের আপিলের রায় ঘোষণা করা হবে আগামীকাল মঙ্গলবার।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চে মুজাহিদের আপিলে উভয় পক্ষের শুনানি শেষে গত ২৭ মে রায় ঘোষণার এ দিন ধার্য করে দেন। আজ সোমবার দুপুরের পর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় রায়ের জন্য মামলাটি এক নম্বরে রাখা হয়েছে। বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।urgentPhoto
মুজাহিদ হলেন চতুর্থ ব্যক্তি, যার মামলায় আনা আপিল শুনানি শেষে রায় ঘোষণার পর্যায়ে পৌঁছাল। মুজাহিদের আপিল শুনানিতে গত ২৯ এপ্রিল থেকে ১৮ মে পর্যন্ত ছয় কার্যদিবসে ট্রাইব্যুনালের রায় ও মামলাসংক্রান্ত নথিপত্র (পেপারবুক) পাঠ শেষ করে আসামিপক্ষ। এরপর গত ২৫, ২৬ ও ২৭ মে মোট তিন কার্যদিবস আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষে মামলায় যুক্তিতর্ক পেশ করা হয়।
আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান, অ্যাডভোকেট শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। এ ছাড়া ২৫ পৃষ্ঠার লিখিত যুক্তিও আদালতে দাখিল করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
এ বিষয়ে মুজাহিদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির এনটিভি অনলাইনকে আজ সোমবার বলেন, ‘মুজাহিদের রায়ের জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় এসেছে। আমরা আশা করি মুজাহিদ সাহেব খালাস পাবেন।’
অপরদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সোমবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগামীকাল রায় ঘোষণা করা হবে। বুদ্ধিজীবী হত্যার ৪৫ বছর পর রায় ঘোষণা হচ্ছে। আমি আশা করি দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ দণ্ড দেওয়া হবে। এবং পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষণা কালকে ঘোষণা করলে ভালো হবে। যদি পূর্ণাঙ্গ রায় না হয় তাহলে দ্রুত সময়ে পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষণার মাধ্যমে দণ্ডকার্যকর হবে।’
এর আগে গত ২৭ মে আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানি শেষ হয়েছিল। ওই দিন রায়ের জন্য ১৬ জুন চূড়ান্ত রায় দেওয়া হবে বলে দিন ধার্য করা হয়।
এ বিষয়ে মুজাহিদের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন এনটিভি অনলাইনকে মুঠোফোনে বলেন, ১৭৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছিল। মুজাহিদ আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন-এ অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি প্রসিকিউশন। যে দুটি অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে, তার একটি বকচর গণহত্যার ঘটনা (অভিযোগ নম্বর-৭)। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন যখন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে, তখন ৭ নম্বর অভিযোগটি ছিলই না। এটি আইনবহির্ভূত।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেফতার হন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ। এ ঘটনায় ২০১১ সালের ২১ জুলাই তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেন কর্মকর্তারা।
এরপর ২ আগস্ট তাঁকে অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে ২০১২ সালের ২১ জুন মুজাহিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট সাতটি অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল। নির্যাতনের অভিযোগে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ১১ আগস্ট আপিল করেন মুজাহিদ।
মুজাহিদের বিরুদ্ধে মোট সাতটি অভিযোগ আনা হয়েছিল। সাতটি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটিতে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। বাকি দুটি অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।