সীমার ইশতেহারে অবকাঠামো ও শিক্ষা খাতে প্রাধান্য

নগরবাসীর ওপর করের বোঝা চাপাবেন না আঞ্জুম সুলতানা সীমা। অতিদরিদ্র মানুষের হোল্ডিং কর মওকুফ করবেন তিনি। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের অধীনে নগরে হবে স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়। নগর পাবে একটি আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম, যেখানে আয়োজিত হবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ। নগরে গড়ে উঠবে আইটি (তথ্যপ্রযুক্তি) পার্ক।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা নিজের নির্বাচনী ইশতেহারে এসব অঙ্গীকার করেছেন। আজ মঙ্গলবার রামঘাটে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে ২৯ দফা অঙ্গীকার তুলে ধরেন সীমা।
এ সময় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, কুমিল্লা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ওমর ফারুক উপস্থিত ছিলেন।
এবারই প্রথম মেয়র পদে নির্বাচন করছেন সীমা। তবে তিনি সিটির কাউন্সিলর ছিলেন। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এবং বিলুপ্ত পৌরসভার প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেন।
ইশতেহারের শুরুতেই তিনি বলেন, ‘আগামী পাঁচ বছরের জন্য বর্ধিত কোনো করের বোঝা জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে না। অতিদরিদ্রদের হোল্ডিং কর মওকুফ করা হবে।’
জলাবদ্ধতা ও অবকাঠামো উন্নয়ন
ইশতেহারের শুরুতেই নগরীর জলাবদ্ধতা ও অবকাঠামোর দিকটি তুলে ধরেছেন আঞ্জুম সুলতানা। তিনি বলেন, ‘শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনই হবে আমার প্রথম অগ্রাধিকার। নগর পরিকল্পনাবিদ ও বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে বাস্তবমুখী ও কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে এ শহরকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করব।’
সীমা বলেন, ‘নগরের অসহনীয় যানজট নিরসনে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। প্রয়োজনে ফ্লাইওভার, ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। ফুটপাতগুলো জনগণের চলাচলে উপযোগী করা হবে।
অবকাঠামোর ব্যাপারে সীমা বলেন, ‘কুমিল্লা সিটি করপোরেশন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাক্রমে রূপকল্প ২০২১ মাথায় রেখে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের জন্য উন্নয়নের মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা হবে। মাস্টারপ্ল্যানের সমুদয় পরিকল্পনা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।’
ভবন নির্মাণের নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে জনসাধারণের ভোগান্তি দূর করা হবে। দ্রুততম সময়ে নকশা অনুমোদন করা হবে বলে তিনি জানান।
শিক্ষার দায়িত্ব নেবে কুসিক
সীমা নিজে একজন শিক্ষক। আর এ কারণেই ইশতেহারের বড় একটা অংশে আছে শিক্ষা নিয়ে ভাবনা। তিনি জানালেন, শিক্ষা নিয়ে তাঁর একগুচ্ছ পরিকল্পনা আছে; যা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে।
ইশতেহার অনুযায়ী, সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে, যা হবে অলাভজনক ও মানসম্মত। কর্মজীবী তরুণ-তরুণীদের কথা বিবেচনায় রেখে একটি নৈশ মহাবিদ্যালয় চালু করা হবে।
সিটি এলাকার পূর্বাঞ্চলে মেয়েদের জন্য একটি মানসম্মত মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে ইশতেহারে আছে, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভিক্টোরিয়া কলেজে পর্যাপ্ত আসন না থাকায় অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রী ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। তাঁদের কথা বিবেচনায় রেখে সদর দক্ষিণ এলাকায় সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে।
ইশতেহারে সীমা বলেন, ‘এ সমস্ত উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা শিক্ষা ক্ষেত্রে কুমিল্লার গৌরব ও ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে পারব বলে আশা রাখি। সরকারের সহযোগিতায় শহরের শিক্ষাব্যবস্থাকে নিয়ে যাব এক অনন্য উচ্চতায়।’
নারী ও শিশুর উন্নয়ন
ইশতেহারে বলা হয়েছে, সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে সর্বাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্বলিত ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতাল স্থাপন করা হবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সেখানে স্বল্প খরচে চিকিৎসা নেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। পাশাপাশি নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে পরিচালিত স্যাটেলাইট ক্লিনিকগুলোর চিকিৎসাসেবার পরিধি বৃদ্ধি করা হবে।
ইশতেহারে আরো বলা হয়, কুমিল্লায় কর্মজীবী নারীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত এই নারীদের আবাসন সংকটের কথা বিবেচনায় রেখে একটি কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল স্থাপন করা হবে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিচ্ছন্নতা
এ ব্যাপারে ইশতেহারে বলা হয়, ‘সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে। রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টার মধ্যে বর্জ্য পরিষ্কার নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি স্বল্পাকৃতির ময়লা, কাগজ ইত্যাদি ফেলার জন্য মূল সড়কের পাশে ক্ষুদ্রাকৃতির বিন/ঝুড়ি স্থাপন করা হবে। বর্জ্যকে বোঝা মনে না করে সম্পদে পরিণত করার জন্য পরিকল্পিত উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ইশতেহারে বলা হয়, ‘সরকার এবং জনসাধরণের সহায়তা নিয়ে কুমিল্লার পরিচ্ছন্ন রূপটি ফিরিয়ে এনে কুমিল্লার মহানগরকে নান্দনিক শহরে পরিণত করব।’ ইশতেহারে আরো বলা হয়, ‘দ্রুততম সময়ের মধ্যে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং চলাচল অনুপযোগী সড়কগুলো সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। পাশাপশি সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন সকল কাঁচা সড়ক পর্যায়ক্রমে পাকা করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
স্টেডিয়াম ও আইটি পার্ক
ইশতেহারে বলা হয়, ‘এখানে আন্তর্জাতিক মানের একটি স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হবে, ফলে কুমিল্লায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজনের সুয়োগ সৃষ্টি হবে। আন্তর্জাতিক সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে পাঁচতারকা হোটেল স্থাপনে জমি বরাদ্দ করে সহযোগিতা করা হবে।’
আরো বলা হয়, ‘কুমিল্লায় একটি আইটি পার্ক স্থাপনা করা হবে। যাতে করে নতুন প্রজন্ম আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে আয়ের উৎস খুঁজে নিতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ফ্রি ওয়াইফাই জোনের আওতায় আনা হবে।’
জবাবদিহিমূলক করপোরেশন
ইশতেহারে বলা হয়, ‘প্রতি তিন মাস পরপর একবার জনতার মুখোমুখি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। যাতে করে বিগত কার্যক্রম সম্পর্কে জনসাধারণের মূল্যায়ন এবং আগামী কার্যক্রম সম্পর্কে তাদের পরামর্শ গ্রহণ করা যায়। এর মাধ্যমে করপোরেশনের কার্যক্রম সম্পর্কে জনসাধারণের প্রতি জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে।’
এ ছাড়া সিটির দক্ষিণাঞ্চলের জন্য আলাদা পরিকল্পনার কথা জানানো হয়। বোটানিক্যাল গার্ডেনসহ মুক্তমঞ্চ, মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত কুমিল্লা নগরী গড়ার কথা বলেন সীমা।