ওপারের লোকজন গরু দিতে চায়, কিন্তু...
দেশে ভারতীয় গরু আসা প্রায় বন্ধ। তাই সীমান্ত এলাকায় গরু ব্যবসায় জড়িত কয়েক লাখ মানুষ এখন বেকার। সরকারি হিসাবে স্বাভাবিক অবস্থায় গড়ে প্রতি মাসে যেখানে আড়াই লাখ ভারতীয় গরু বৈধভাবে আসে, সেখানে মে মাসে এসেছে মাত্র পঁচিশ হাজার। স্থানীয় গরু ব্যবসায়ীরা মনে করেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী কোরবানি ঈদে দেশে একটি বড় অংশের মানুষের জন্য পশু কোরবানি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
urgentPhoto
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) মেম্বার ও খাটাল ব্যবসায়ী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ওপারের লোকজন গরু দিতে চায়, কিন্তু ওই পারে যে সীমান্তরক্ষী আছে বিএসএফ, তারা খুব কঠোর অবস্থানে আছে। বিশেষ করে ওদের সার্চ লাইটগুলো, আর ওরা মানুষ দেখলে গুলি করে। এ অবস্থা আমার মনে হয় কুরবানি পর্যন্ত চলতে থাকবে।’
সাতক্ষীরার গরু আনা নেওয়ার অন্যতম একটি রুট বৈকারী সীমান্ত পথ। এক সময় এই পথ দিয়ে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করত। গরু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে কয়েক মাস আগেও রীতিমতো মেলা বসত এখানে। আর এখন ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা বৈকারী ইউনিয়ন বলা যায় গরুশূন্য। প্রতিটি গ্রামে খাটাল নামে পরিচিত গরু রাখার জায়গায় গরু চোখে পড়ে না বললেই চলে। এক সময় যেখানে প্রায় এক লাখ গরু একসাথে রাখা হতো, এখন এসব বিশাল বিশাল খাটালে সব মিলিয়ে মাত্র কয়েকটি গরু।
এ ছাড়া সোনাই নদীটিকে বলা যায় সীমান্ত রেখা। নদী এপারে বাংলাদেশ ওপারে ভারত। এ পথে প্রতিদিন অনন্ত ১০ হাজার গরু আসত কয়েক মাস আগেও।
সীমান্ত ঘেঁষা সাতক্ষীরার যে রাস্তাগুলোতে যেখানে ভারতীয় গরুবাহী ভ্যানের আধিক্য ছিল এখন সেখানে দাঁড়ালে মাঝে মধ্যে দেখা মেলে গরুবাহী ভ্যান। আর এসব ভ্যানে যেখানে ভারতীয় গরু বিক্রির জন্য নেওয়া হতো, এখন যাচ্ছে দেশি গরু, আর সংখ্যায়ও অনেক কম।
এক গরু ব্যবসায়ী বলেন, ‘ইন্ডিয়ার গরু আসছে অনেক কম। প্রতিদিন এই দুইশ, একশ, দেড়শ।’
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর বলছে, প্রতি বছর ভারত থেকে প্রায় ২২ লাখ গরু বৈধভাবে দেশে আসে। আর এ খাতে লেনদেন হয় অন্তত তিনশ কোটি টাকা।
তথ্য বলছে, ২০১৩ সালে বাংলাদেশে গরু এসেছে ২৩ লাখ ৭৪ হাজার আর ২০১৪ সালে ২০ লাখ ৩২ হাজার। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এসেছে এক লাখ, ফেব্রুয়ারিতে সাড়ে ৪৮ হাজার, আর মার্চে ৪৫ হাজার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মে মাসে গরু আসার সংখ্যা পঁচিশ হাজারের বেশি হবে না।
তবে, ভারতীয় গরু আসার পথে কোনো বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছে বিজিবি।
বিজিবি ৩৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক মেজর নজির আহমেদ বকশি বলেন, ‘গরু আসলে আমাদের বিজিবির পক্ষ থেকে কোনো বাধা নেই। গরু আসুক। যেটা সরকার নিয়ম করে দিয়েছে সে নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশে গরু আসবে। সে হিসেবে ট্যাক্স যেভাবে পরিশোধ করার কথা সেভাবে পরিশোধ করবে এবং বিজিবি তাদের ওপর অর্পিত যে দায়িত্ব সেটা নিশ্চিত করবে।’
গত ২ ফেব্রুয়ারি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনে এসে বিএসএফকে বাংলাদেশে গরু যাওয়া বন্ধের নির্দেশ দেন। এর পর থেকে বাংলাদেশে গরু আসা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
ব্যবসায়ীরা জানান, এ অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গে এই মুহূর্তে লাখ লাখ গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছে সে দেশের ব্যবসায়ীরা। আর বৈকারী ইউনিয়নে গরু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরাও বেকার।