স্ত্রী নির্যাতনের মামলায় পুলিশ কর্মকর্তা কারাগারে
নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার আসামি চট্টগ্রাম পুলিশের পরিদর্শক রেফায়েত উল্লাহ চৌধুরীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। আজ রোববার দুপুরে খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নূরুল আমিন বিপ্লব এই আদেশ দেন।
গতকাল শনিবার খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে রেফায়েত উল্লাহকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান তাঁর স্ত্রী নাসরিন আক্তার রুমা। ওই সময় পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পরকীয়া, স্ত্রী নির্যাতন ও অবৈধ সম্পত্তিসহ নানা অভিযোগ আনা হয়।
গত ১৮ জানুয়ারি ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন নাসরিন। ওই মামলায় ট্রাইব্যুনাল গত ৭ মার্চ তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
ওই মামলায় জামিন নিতে পুলিশ পরিদর্শক রেফায়েত উল্লাহ চৌধুরী আজ সকালে খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। দুপুরে মামলার শুনানি শুরু হলে পুলিশ কর্মকর্তার পক্ষে অ্যাডভোকেট মসিউর রহমানসহ এক ডজন আইনজীবী জামিনের পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করেন। তাঁর আইনজীবীরা দাবি করেন, পুলিশ কর্মকর্তা রেফায়েত উল্লাহ চৌধুরী তালাক দেওয়ার পর স্ত্রী ক্ষিপ্ত হয়ে এই মামলা করেছেন।
বাদীপক্ষে অ্যাডভোকেট মো. আবদুল লতিফ আসামিপক্ষের জামিনের আবদনের বিরোধিতা করে পুলিশ কর্মকর্তা অবৈধ অর্থের প্রভাব বিস্তারের কথা জানান। তিনি আদালতকে জানান, অবৈধ অর্থের প্রভাব বিস্তার করে আসামি আইনকে পক্ষে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ নূরুল আমিন বিপ্লব উভয়পক্ষের শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
পরে নাসরিন আক্তার রুমা ও তাঁর আইনজীবী বিচারকের আদেশে সন্তোষ প্রকাশ করেন। অ্যাডভোকেট আবদুল লতিফ জানান, পুলিশ যে আইনের ঊর্ধ্বে নয়, এই আদেশে সেটি প্রতিফলন হয়েছে।
এদিকে স্ত্রীর মামলার পর রেফায়েত উল্লাহকে চট্টগ্রাম পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। পুলিশ কর্মকর্তা রেফায়েত উল্লাহ দাবি করেন, স্ত্রীকে তিনি গত জানুয়ারিতে তালাক দিয়েছেন। তবে স্ত্রী এ বিষয়ে কোনো কাগজ পাননি বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান।
আজ আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশের পরিদর্শক রেফায়েত উল্লাহ চৌধুরী বলেন, তাঁর স্ত্রী ইয়াবা ও অন্য পুরুষের প্রতি আসক্ত। এ কারণেই তিনি স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন। এর পরই ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর সাবেক স্ত্রী ওই মামলা করেছেন।
নাসরিন আক্তার ওই তালেকের কপি পাননি-এমন প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, তিনি তালাক দিলে সেই তালাক হয়েছে। স্ত্রীর কোনো দাবি-দাওয়া থাকলে সব মিটিয়ে দেওয়া হবে।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, তাঁর কোনো অবৈধ সম্পত্তি নেই। ফ্ল্যাটসহ ব্যাংকের অর্থ সবই তাঁর বৈধ উপায়ে আয় করা। তালাক দেওয়া স্ত্রীকে আর ফেরত নেবেন না। তবে নিজের পরকীয়ার বিষয়ে স্ত্রীর করা অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কথা বলেননি।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নাসরিন আক্তার বলেন, তাঁদের ১৮ বছরের সংসার জীবনে দুই মেয়েসন্তান রয়েছে। পুলিশ পরিদর্শক রেফায়েত উল্লাহ পটিয়া থানার ওসি থাকার সময় মাদক ব্যবসা ও সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। একই সঙ্গে হ্যাপী চৌধুরী নামের এক নারীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এ ঘটনায় প্রতিবাদ করলে তাঁকে নির্যাতন করা হয়।
নাসরিনের অভিযোগ, বিয়ের আগেও তাঁর স্বামীর নারী কেলেঙ্কারি ছিল। সাতক্ষীরা, যশোরসহ বিভিন্ন জেলায় কর্মরত থাকার সময় একাধিক নারীর সঙ্গে তাঁর পরকীয়ার সম্পর্ক হয়। যশোর কোতোয়ালি থানায় উপপরিদর্শক (এসআই) পদে দায়িত্ব পালনের সময় একজন নারীর সঙ্গে কেলেঙ্কারির ঘটনা তিনি নিজে উপস্থিত থেকে মিটিয়ে দেন। তবে সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তখন ওই সব মুখ বুজে সহ্য করেছিলেন। এখন তাঁর দুই মেয়েকে আটকে রাখা হয়েছে। তাদের ভয় দেখানো হচ্ছে। শুধু তাই নয়, তাঁর নামে কুৎসা রটাচ্ছেন রেফায়েত।