খাদ্যগুদামে ‘চাঁদাবাজি’, ঠিকাদারদের ধর্মঘট

রাজশাহী বিভাগে আজ বুধবার থেকে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে খাদ্য পরিবহন ঠিকাদার সমিতি। এর ফলে বিভাগের আট জেলায় সকাল থেকেই সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে খাদ্যশস্য (চাল ও গম) পরিবহন বন্ধ রয়েছে।
ঠিকাদার সমিতির নেতাদের অভিযোগ, বিভাগের খাদ্য গুদামশ্রমিকরা প্রতিদিন অন্তত ২০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছেন ঠিকাদারদের কাছ থেকে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বারবার অভিযোগ করেও কোনো সমাধান না পাওয়ায় হয়রানি, চাঁদাবাজি বন্ধসহ তিন দফা দাবিতে এ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে।
রাজশাহী বিভাগীয় খাদ্য পরিবহন ঠিকাদার সমিতির সভাপতি নির্মল কর্মকার বলেন, ‘গুদামশ্রমিকদের চাঁদাবাজিতে আমরা অতিষ্ঠ। এর বিহিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবেই।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রাজশাহী আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা এস এম মহসিন বলেন, ‘অভিযোগটি আমি শুনেছি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। খাদ্য পরিবহন ধর্মঘটের বিষয়টির সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।’
রাজশাহী বিভাগীয় খাদ্য পরিবহন ঠিকাদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম বলেন, ‘শ্রমিকরা চাঁদা আদায় করলেও সেই টাকার ভাগ গুদাম কর্মকর্তারাও পান। এ কারণে অভিযোগ করলেও কৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে এবার আর আমরা বসে থাকব না। এর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বিভাগের আট জেলায় খাদ্যশস্য পরিবহন কার্যক্রম বন্ধ রাখা হবে, যা অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত চলবে।’
চাঁদাবাজির বিষয়টি সমাধানের জন্য সর্বশেষ গত ২৬ জুন খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, রাজশাহী আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে রাজশাহী বিভাগীয় খাদ্য পরিবহন ঠিকাদার সমিতি।
ঠিকাদারদের লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘শ্রমিকদের চাঁদাবাজি বন্ধের জন্য বারবার ‘ঠিকাদারদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে একাধিকবার অভিযোগ দেওয়ার পরেও বিষয়টি নিয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এমনকি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। ফলে ঠিকাদারদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশার সষ্টি হয়েছে। এই অবস্থায় খাদ্য গুদামশ্রমিকদের অবৈধ চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে যে কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সংশ্লিষ্ট খাদ্য বিভাগীয় কর্মকর্তাদেরই তার দায় বহন করতে হবে।’
খাদ্য পরিবহন ঠিকাদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক জানান, তাঁরা ২৩০ জন ঠিকাদার সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন খাদ্যগুদাম থেকে চাল ও গম সরবরাহ করে থাকেন। এটি করতে গিয়ে কোনো গুদাম থেকে খাদ্য নিতে হয়, আবার কোনো গুদামে গিয়ে সেগুলো রাখতে হয়। একজন ঠিকাদারকে একটি বরাদ্দপত্রে সর্বোচ্চ ৫০ মেট্রিক টন খাদ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই বরাদ্দকৃত খাদ্য সরবরাহের জন্য তিনটি ট্রাক প্রয়োজন হয়। আর প্রতি ট্রাকে মালামাল ওঠানো বা খালাসের জন্য গুদামশ্রমিকদের চাঁদা গুনতে হয় ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা করে। ফলে ৫০ মেট্রিক টন চাল-গম ওঠানো-নামানো করতেই একজন ঠিকাদারকে কেবল শ্রমিকদেরই চাঁদা দিতে হয় কমবেশি দুই হাজার টাকার মতো। প্রতিদিন একটি গুদামে গড়ে ৩০-৪০ ট্রাক খাদ্য ওঠানো-নামানোর কাজ করা হয়। সেই হিসেবে গড়ে প্রতিটি গুদাম থেকেই চাঁদা ওঠে অন্তত ১৫-১৭ হাজার টাকা। আর ৯০টি গুদাম থেকে অন্তত ১৪-১৫ লাখ টাকা। এভাবে গত পাঁচ বছর ধরে গুদামশ্রমিকরা পরিবহন ঠিকাদারদের কাছ থেকে জোর করে চাঁদা আদায় করছেন।
ঠিকাদাররা আরো জানান, খাদ্য ওঠানো-নামানোর জন্য সরকার নিয়োগকৃত আলাদা শ্রমিক সরবরাহকারী ঠিকাদার আছেন। তাঁরাই শ্রমিকদের পারিশ্রমিক দিয়ে থাকেন। কিন্তু তারপরও মালামাল খালাস বা ওঠানোর জন্য ওই শ্রমিকদেরই অহেতুক চাঁদা দিতে হয় তাঁদের। আর টাকা না দিলেই দিনের পর দিন গুদামের সামনে, কখনো মালভর্তি অবস্থায় আবার কখনো মালামালের জন্য ঠিকাদারদের ট্রাকগুলোকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এভাবে পাঁচ বছর ধরেই গুদামশ্রমিকরা খাদ্য পরিবহন ঠিকাদারদের হয়রানি করে চলেছে।