এবার দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ-জামাত কোথায় হলো?
ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া মাঠ বিখ্যাত। জনশ্রতি আছে, ১৮২৮ সালে এই মাঠে ঈদের জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছিলেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’। যা এখন শোলাকিয়া নামেই পরিচিত।
সাধারণ মুসল্লিদের বিশ্বাস, বেশি লোক একসঙ্গে নামাজ পড়ে প্রার্থনা করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। সে কারণে বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন শোলাকিয়ায় নামাজ আদায় করতে আসেন। এখানে মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে নামাজ আদায় করতে পারেন তার জন্য নিরাপত্তা, যাতায়াত ব্যবস্থাসহ নানা উদ্যোগ নিতে সরকারি তরফেও চেষ্টার কমতি থাকে না।
যদিও এখানে ‘সোয়া লাখ’ মুসল্লির নামাজ আদায়ের কথা বলা হয়, তবে কখনো কখনো এর থেকে বেশি মানুষের নামাজ আদায়ের কথাও কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে। বৃহৎ জমায়েতের ঈদ-নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতেও থাকে শোলাকিয়া মাঠ।
শোলাকিয়ার পর বাংলাদেশের আর কোথাও এতদিন পর্যন্ত এত বেশি সংখ্যক মানুষের একসঙ্গে নামাজ আদায়ের কথা শুনা যায়নি। ফলে দেশের ‘সর্ববৃহৎ’ ঈদ জামাতের জন্য ‘তকমাটি’ এখনো শোলাকিয়ার পাশের শোভা পায়। আর এ নিয়ে কিশোরগঞ্জবাসীর গৌরবেরও অন্ত নেই।
কিন্তু এবার কি তার ব্যতিক্রম হতে যাচ্ছে?
কারণ এবার দিনাজপুর শহরের গোর-এ-শহীদ ঈদগাহে একত্রেঅনেক মানুষের ঈদের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আগেও এখানে এক লাকের কাছাকাছি মানুষ নামাজ আদায় করতেন বলে স্থানীয়রা জানান। এবার তার চেয়ে বড় পরিসরে মাঠ তৈরি করা হয়। আজ ঈদুল ফিতরের নামাজে জাতীয় সংসদের হুইপ ও দিনাজপুর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ইকবালুর রহিম দাবি করেন, সেখানে একসঙ্গে পাঁচ লাখ মুসল্লি ঈদের জামাতে অংশ নিয়েছেন। তিনি আরো দাবি করেন, ‘উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদের নামাজ আদায় করলাম। এখানে পাঁচ লক্ষাধিক মুসল্লি শান্তিপূর্ণভাবে ঈদের জামাত আদায় করেছেন।’
দীর্ঘ সময় ধরেই গোর-এ শহীদ মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। তবে ২০১৫ সালে এর পরিসর বড় করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। মাঠটির মোট জমির পরিমাণ ৬৫ একর। এর মধ্যে একটি স্টেশন ক্লাব আছে, যার দখলে আছে ২০ একরের কিছু বেশি জমি। এর বাইরে বাকি প্রায় ৪০ একর জমিই ফাঁকা।
এখানে জেলা পরিষদ তিন কোটি পঁচাত্তর লাখ টাকা ব্যয়ে ৫২ গম্বুজবিশিষ্ট একটি মিনার তৈরি করেছে। মিনার হবে লম্বায় ৫১৬ এবং চওড়ায় ২০ ফুট। সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে মাঠের সম্মুখে আছে গম্বুজগুলো। মাঠের মধ্যপথে রাস্তা থেকে উত্তরে ১২০০ ফুট চওড়া ও ৯০০ ফিট লম্বা অবস্থানে রয়েছে। এর মধ্যে মেহেরাব সংবলিত ৩২টি আর্চ শোভাবর্ধন করবে। মাঠের সব কাজ এখনো শেষ হয়নি। গোর-এ শহীদ মাঠে নামাজ আদায়ের জন্য ছুটে আসেন পাশের জেলা ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী ও জয়পুরহাট জেলার মুসল্লিরা। বাস-ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে ঈদের নামাজে অংশ নেন আশপাশের জেলার লোকজন।
অপরদিকে, কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার মূল মাঠের আয়তন সাত একর। যদিও মূল মাঠের বাইরেও আশপাশের রাস্তাঘাট, রেললাইন, নদীর পাড়া এমনকি মানুষের বাড়ির আঙ্গিনায় বসেও অনেকে নামাজ আদায় করে থাকেন। গত বছর ঈদুল ফিতরে সেখানে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটলেও ঈদের নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লির সংখ্যা কমেনি বলে দাবি করেছেন কর্তৃপক্ষ।
এখানে রেওয়াজ অনুযায়ী, জামাত শুরুর আগে শটগানের ছয়টি ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। জামাত শুরুর ৫ মিনিট আগে তিনটি, তিন মিনিট আগে দুটি এবং এক মিনিট আগে একটি গুলি ছুড়ে নামাজের জন্য মুসল্লিদের সংকেত দেওয়া হয়।