বিএনপি ত্রাণ না দিয়ে ঢাকায় বসে ফাঁকা আওয়াজ দেয় : মায়া
দুর্যোগের সময় বিএনপির নেতারা ত্রাণ না দিয়ে ঢাকায় বসে ফাঁকা আওয়াজ দেন বলে মন্তব্য করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। তিনি বলেন, দেশের যে কোনো দুর্যোগে আওয়ামী লীগই জনগণের পাশে দাঁড়ায়।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বন্যাদুর্গত দুটি স্থান পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ শেষে এসব কথা বলেন মন্ত্রী। এ সময় তিনি ৩০০ মেট্রিক টন চাল, ৩০ লাখ টাকা, এক হাজার বান্ডেল টিন এবং আশ্রয়কেন্দ্রের অসহায় মানুষদের জন্য শুকনো খাবার বরাদ্দের ঘোষণা দেন।
মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, শেখ হাসিনার অঙ্গীকার অনুযায়ী দুর্যোগ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ত্রাণসহায়তা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, ‘খাওয়ার ব্যবস্থা হবে, চিকিৎসার ব্যবস্থা হবে, থাকার ব্যবস্থা হবে। এবং যে পর্যন্ত এই দুর্যোগ শেষ না হবে, আমরা আপনাদের সাহায্য অব্যাহত রাখব।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল, যুগ্ম সচিব মো. মহসীন, মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মতিন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন, কুলাউড়া উপজেলার চেয়ারম্যান আ স ম কামরুল ইসলাম, মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজালাল, মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নেছার আহমদ, মৌলভীবাজারের পৌর মেয়র আলহাজ্ব মো. ফজলুর রহমানসহ জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারা।
মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখায় তৃতীয় দফায় হওয়া বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। গতকাল উজানে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বন্যাকবলিত এলাকায় দুই থেকে তিন ইঞ্চি পানি কমেছে।
তবে এখনো জেলা সদরের সঙ্গে বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্থরের ১৮৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ২৯টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে প্রতিদিন বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়ছে।
অন্যদিকে রাজনগরে নতুন করে আবার বন্যা দেখা দিয়েছে। কুশিয়ারা নদী ও কাউয়াদীঘি হাওরের পানি বেড়ে যাওয়া এবং পাহাড়ি ঢলে উপজেলার ফতেপুর, উত্তরভাগ, মুন্সিবাজার, পাঁচগাঁও ইউনিয়নের প্রায় ৫০টি গ্রামের এক লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যা ও আশ্রয়কেন্দ্র তৈরির কারণে ১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া পানির কারণে আরো অন্তত ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। বন্যার কারণে মৌলভীবাজার-রাজনগর-বালাগঞ্জ সড়কে বাস যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, আশ্রয়কেন্দ্রসহ বন্যা আক্রান্ত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত হয়েছে। জেলায় সবশেষ ২৯৪ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১০ লাখ টাকা এবং ৫৯ হাজার ২০০ ভিজিএফ কার্ডের অনুকূলে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে তিন ধাপে ৬৫০ মেট্রিক টন চাল, ৩০ লাখ ৮০ হাজার টাকা ছাড়াও তিন মাসের জন্য পাঁচ হাজার ভিজিএফ কার্ডের অনুকূলে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল এবং ৫০০ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম জানান, প্রতিদিন তিনিসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কুলাউড়া, জুড়ী ও রাজনগর উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করছেন এবং সেই সঙ্গে ত্রাণ বিতরণ করছেন।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় ইন্দ্র শংকর চক্রবর্তী জানান, কুশিয়ারা নদীর পানি কিছুটা কমলেও শেরপুরে পানি বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানে বৃষ্টিপাত হলে আবার পানি বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।