যুবলীগ নেতার মায়ের কুলখানি, তাই স্কুল বন্ধ
যুবলীগ নেতার মায়ের কুলখানি। তাই বন্ধ রাখা হয় স্কুলের পরীক্ষা। কারণ স্কুলের মাঠেই আয়োজিত হয়েছে কুলখানির খাওয়া-দাওয়া।
গতকাল শনিবার শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে ওই ঘটনা ঘটে। গোসাইরহাট পৌরসভা যুবলীগের আহ্বায়ক ও পৌরসভার কাউন্সিলর কামাল উদ্দিন সরদারের মায়ের কুলখানি উপলক্ষে বন্ধ ছিল ইদিলপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষা। ওই স্কুলের মাঠেই আয়োজন করা হয় কামাল উদ্দিনের মায়ের কুলখানির গণভোজ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কামাল উদ্দিন সরদার ওই বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য। কুলখানির ওই আয়োজন দেখাশোনা করেন বেশির ভাগ শিক্ষকসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
গত বৃহস্পতিবার থেকে উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে একযোগে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা শুরু হয়। অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসনের অনুমতি না নিয়েই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান শনিবার পরীক্ষা নেননি ও স্কুলও বন্ধ রাখেন। কোন ক্ষমতা বলে স্কুল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তা জানতে চেয়ে আজ রোববার প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন (শোকজ) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইয়াহ ইয়া খান। আগামী তিনদিনের মধ্যে জবাব চেয়েছেন ইউএনও।
বিদ্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জেলার গোসাইরহাট উপজেলাসহ বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গত বৃহস্পতিবার থেকে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা শুরু হয়। একই সূচিতে একই সময়ে উপজেলার সব বিদ্যালয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। শনিবার ছিল বাংলা দ্বিতীয়পত্র ও ইংরেজি দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষা। গত বৃহস্পতিবার পরীক্ষা চলাকালে ইদিলপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান পরিক্ষার্থীদের অনিবার্য কারণ দেখিয়ে শনিবারের পরীক্ষা স্থগিতের নোটিশ দিয়ে দেন।
ইদিলপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ওই পরীক্ষায় ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির এক হাজার ৭২৬ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের দুটি শিফটে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। শনিবারও ছিল দুটি শিফটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
ইদিলপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘প্রশ্নপত্র না পাওয়ার কারণে পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য কামাল উদ্দিন সরদারের অনুষ্ঠানের বিষয়টিও বিবেচনায় ছিল। সব পরীক্ষা শেষ হলে স্থগিত রাখা পরীক্ষাটি নেওয়া হবে।’
এ ব্যাপারে গোসাইরহাট পৌরসভা যুবলীগের আহ্বায়ক কামাল উদ্দিন সরদার বলেন, ‘আমার বাড়িতে জায়গা কম থাকায় আমি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বরাবর লিখিত আবেদন করে বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠানের আয়োজন করি।’
গোসাইরহাট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। কোনো অবস্থাতেই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা স্থগিত রেখে কোনো ব্যক্তির অনুষ্ঠান করার অনুমতি দিতে পারেন না। এ বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইয়াহ ইয়া খান বলেন, ‘ব্যক্তিগত অনুষ্ঠান করার জন্য বিদ্যালয় বন্ধ রাখার এখতিয়ার প্রধান শিক্ষকের নেই। কোন ক্ষমতা বলে তিনি বিদ্যালয় বন্ধ রেখেছেন তিনদিনের মধ্যে জানতে চেয়ে তাঁকে শোকজ করা হয়েছে।’