যে প্রশ্নের উত্তর পায়নি ছোট্ট ঈশান
বাবাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আর ছোট্ট ঈশান টেলিভিশনে দেখছে সেই দৃশ্য। ঈশানের বয়স পাঁচ ছুঁইছুঁই। সে শুধু জানে, পুলিশ শুধু দুষ্টু লোকদেরই ধরে নিয়ে যায়। তাই মায়ের কাছে খুদে ঈশানের প্রশ্ন, ‘আমার বাবাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে কেন? বাবা কি দুষ্টু?’
ছোট্ট ছেলেটির এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেননি তার মা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ‘বিকৃতি’র অভিযাগ এনে বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তারিক সালমনের বিরুদ্ধে মামলা করেন বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও মহানগর আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক (বর্তমানে বহিষ্কৃত) ওবায়েদুল্লাহ সাজু। সেই মামলায় ১৯ জুলাই সকালে ইউএনও তারিক সালমনের জামিন নামঞ্জুর করে জেলে পাঠানোর আদেশ দেন বরিশালের একটি আদালত। পরে ওই দিনই দুপুরে আবার তাঁকে জামিন দেওয়া হয়। ইউএনওর এই ঘটনা দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়।
ইউএনওকে হাতকড়া পরিয়ে টেনেহিঁচড়ে আদালত থেকে হাজতে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে গত ২২ জুলাই আদালত পুলিশের ছয় সদস্যকে প্রত্যাহার করে তাদের পুলিশ লাইনসে ক্লোজড করা হয়।
দেশব্যাপী আলোচনা-সমালোচনার পর গত রোববার ইউএনও তারিক সালমনের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। মামলার বাদী ওবায়েদুল্লাহ সাজু আদালতে উপস্থিত হয়ে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেন। পরে শুনানি শেষে আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন।
মামলা প্রত্যাহারের পর গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ইউএনও তারিক সালমন। তাঁর স্ট্যাটাসটি এখানে হুবহু তুলে ধরা হলো :
‘‘যে প্রশ্নের উত্তর পায়নি ঈশান
ওর নাম রেখেছি ‘তরুণ ঈশান’। নজরুলের কবিতা থেকে। আমার একমাত্র সন্তান। বয়স পাঁচ ছুঁই-ছুঁই। সে একটা প্রশ্ন করেছে তার মাকে। সেই প্রশ্নের উত্তর এখনো পায়নি সে। টিভিপর্দায় সে দেখেছে যে তার বাবাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। সে জানে, পুলিশ দুষ্টু লোকদেরই ধরে শুধু (কারণ সে মাঝেমধ্যে ‘ক্রাইম পেট্রল’ দেখে সনি আট চ্যানেলে)।
ঈশান জিজ্ঞাসা করেছে তার মাকে, ‘আমার বাবাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে কেন? বাবা কি দুষ্টু?’। তনু, আমার স্ত্রী, এই প্রশ্নটির জবাব দিতে পারেনি তার ছেলেকে এখনো।
এই প্রশ্নের উত্তরটি আমরা খুঁজছি।”