ঈদের দিনেও বেতনের জন্য শ্রমিকদের কান্না
সুপ্রিম কোর্টসংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠ। নতুন জামা-কাপড় পরে সেখানে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন হাজার হাজার মানুষ। আনন্দ, কুশলবিনিময় করেছেন। পাশেই জাতীয় প্রেসক্লাবের চিত্রটা ভিন্ন। সেখানে সমবেত কয়েকশ লোকের চোখ অশ্রুসিক্ত। বেতন না পাওয়ায় ঈদের দিনেও রাস্তায় নামতে হয়েছে তাঁদের।
‘সোয়ান গার্মেন্টসের শ্রমিকরা না খেয়ে মরে, প্রধানমন্ত্রী কীভাবে ঈদ করে’-ধরনের স্লোগান দিয়ে আজ শনিবার সকাল থেকেই অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন প্রতিষ্ঠানটির কয়েকশ শ্রমিক। তাঁদের কেউই গত তিন মাসে বেতন পাননি। তাই এক সপ্তাহ ধরে প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলন করে আসছেন। কিন্তু বিষয়টির সুরাহা না হওয়ায় ঈদের দিনেও রাস্তায় নামতে হলো।
এ ব্যাপারে কথা হয় সোয়ান গার্মেন্টসের শ্রমিক জোবেদা খাতুনের সঙ্গে। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গত ১৭ বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠানে কাজ করছি। কোনো নোটিশ ছাড়াই তিন মাস যাবৎ গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ বেতন বন্ধ রেখেছে। এতে ঈদের কোনো কেনাকাটা করতে পারিনি।’
আরেক শ্রমিক তাসলিমা বলেন, ‘ভাই সরকার আমাগো বেতনের ব্যবস্থা না করে আমাগোরে উল্টা লাঠিপেঠা করছে।’
সোয়ান গার্মেন্টসের শ্রমিকরা গত রোববার থেকে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নেতৃত্বে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। এ বিষয়ে কথা হয় সংগঠনটির কাযর্করী সভাপতি সাদেকুর রহমান শামীমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘তিন মাস ধরে শ্রমিকরা বকেয়া বেতন দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। তবে কেউ উদ্যোগী হয়ে সমস্যাটির সমাধান করছে না।’
জানতে চাইলে ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মন্টু ঘোষ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, কারখানাটির চীনা মালিক এপ্রিল মাসে মারা গেছেন। মালিকানা নিয়ে এখন জটিলতা চলছে। তবে বিষয়টি সহজেই মীমাংসা করা সম্ভব। কারণ কারখানার জায়গাটি ইসলামী ব্যাংকের কাছে বন্ধক রেখে নয় কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন মালিক। একই সঙ্গে জমিটি বিক্রির জন্য একটি গ্রুপের সঙ্গে ১৩ কোটি টাকা দাম চূড়ান্ত হয়ে আছে। ফলে ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা আদায় করলে শ্রমিকদের অন্তত দুই মাসের বেতন দেওয়া সম্ভব হতো। তিনি বলেন, ঈদের আগে গত মঙ্গলবার দেশের সব কারখানা শ্রমিকদের সরকার-ঘোষিত ঈদ-বোনাস দেওয়ার শেষ দিন ছিল। কিন্তু সেই সীমা শেষ হয়ে ঈদের দিনেও পায়নি তারা পাওনা বকেয়া বেতন। কোনো সময়সীমাই মানেননি পোশাক কারখানার মালিকরা।
গার্মেন্টস শ্রমিকদের সঙ্গে আন্দোলনে একাত্মতা পোষণ করেন কমিউনিস্ট পার্টি অব বাংলাদেশের (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম ও কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মনজুরুল আহসান খান।
আন্দোলন প্রসঙ্গে মনজুরুল আহসান খান সাংবাদিকদের বলেন, শ্রমিকদের বকেয়া বেতনের দাবি আইনসঙ্গত। যারা শ্রমিকদের পাওনা দিচ্ছে না তারা আইনের লঙ্ঘন করছে। যেখানে শ্রমিকরা বোনাসের দাবি করার কথা সেখানে আজ শ্রমিকরা ন্যায্য বেতন পাওনার দাবি জানাচ্ছে। ঈদের দিনে যখন সবাই আনন্দ-উল্লাসে ব্যস্ত, তখন এ শ্রমিকরা না খেয়ে রাস্তায় পড়ে আছে। বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে দেখে প্রধানমন্ত্রী বিষয়টিতে নজর দিলে এর সুরাহা হবে।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, বেতন না পেয়ে এক হাজার ৩০০ অসহায় শ্রমিক প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান করছে। সরকারের মন্ত্রীরা বিলাসী জীবন-যাপন করছে আর দেশের সাধারণ মানুষ না খেয়ে মারা যাচ্ছে। অবিলম্বে শ্রমিকদের বেতন বকেয়া পরিশোধ করতে হবে।
শ্রমিক ও ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১০ মার্চ মালিক মারা যাওয়ার পর সোয়ান গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যায়। তাঁর স্ত্রী বেতন দিতে আগ্রহী থাকলেও উত্তরাধিকারী জটিলতায় বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকে বন্ধক রাখা জায়গা বিক্রি করে সরকার শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করতে পারে।