ট্রান্সফরমার বসানোর কথা বলে চাঁদা নিলেন ইউপি সদস্য
ভারি বর্ষণ ও বজ্রপাতের কারণে বিদ্যুতের ট্রান্সফরমারটি পুড়ে যায়। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সদস্যের কাছে সমস্যাটি নিয়ে আসে স্থানীয় বাসিন্দারা। ওই ইউপি সদস্য প্রায় দেড় হাজার পরিবার ও একটি বাজারের দুই শতাধিক দোকান থেকে চাঁদা আদায় করেন। তিনি ও তাঁর দলের লোকজন জানান, ট্রান্সফরমার স্থাপন করতে ওই টাকা প্রয়োজন।
স্থানীয় বাসিন্দারা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে গিয়ে জানতে চান ট্রান্সফরমারটি স্থাপনের জন্য কত টাকা প্রয়োজন। ওই দপ্তর থেকে জানানো হয়, ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়ে গেলে কর্তৃপক্ষই আবার তা লাগিয়ে দেয়, এ জন্য কোনো টাকা দিতে হয় না।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শহীদুল ইসলামে বিরুদ্ধে ট্রান্সফরমার বসানোর নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা জেলা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে ওই এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী যুবক এই চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। গত বন্যায় এই জেলার অনেক এলাকা প্লাবিত হয়। ভারি বর্ষণের ফলে এসব এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অনেক এলাকায় বজ্রপাতে ট্রান্সফরমার পুড়ে যায়। গত ১৫ আগস্ট রাতে মালাদাম হরি মন্দিরের কাছে পঞ্চগড় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ট্রান্সফরমার হঠাৎ পুড়ে গেলে এই এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রাম এবং মালাদাম বাজার বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এই ট্রান্সফরমারের সঙ্গে সংযুক্ত মালাদাম, তেলিপাড়া, নলেহাপাড়া, মাগুরা গ্রামের প্রায় দেড় হাজার পরিবার এবং মালাদাম বাজারের দুই শতাধিক দোকান বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়। ওই দিনই এসব পরিবারের মানুষজন এবং বাজারের দোকানিরা স্থানীয় ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলামের কাছে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করার জন্য বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানায়।
পরদিন এই ইউপি সদস্যের আস্থাভাজন মালাদাম গ্রামের পিয়ার উদ্দিন রেনু, আবদুস সাত্তার, তিলক বর্মণ, দীনেশ চন্দ্র বর্মণ বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাঁদা তোলা শুরু করেন। তাঁরা প্রত্যেক বাড়িতে মিটারপ্রতি ১৫০ টাকা এবং প্রত্যেক দোকান থেকে ২০০ টাকা হারে চাঁদা চান। চাঁদা আদায়কারীরা সবাইকে বলেন, ইউপি সদস্য শহীদুল ইসলাম ট্রান্সফরমার স্থাপনের ব্যবস্থা করছেন বলে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে চাঁদা আদায়ের দুদিন পর অভিযোগকারীরা বিদ্যুৎ অফিসে ট্রান্সফরমার বাবদ কত টাকা লাগবে জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষ জানায় এতে কোনো টাকা পয়সা নেওয়া হয় না। পঞ্চগড় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড তাঁদের আরো জানায়, ট্রান্সফরমারটি স্থাপন বাবদ কারো কাছে কোনো টাকা-পয়সা চাওয়া হয়নি।
মালাদাম গ্রামের অনুকূল রায় বলেন, ‘প্রত্যেক বাড়ি থেকে দেড়শো টাকা নিয়েছে। কারো কাছে ২০০ টাকা নিয়েছে। সব কিছু জেনে টাকা ফেরত চেয়েছি। মেম্বার বলছে বিদ্যুৎ চাইলে ট্রান্সফর্মা বাবদ টাকা দিতে হবে।’
এদিকে ওই এলাকায় দায়িত্ব প্রাপ্ত বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী জাহিদুল হক বলেন, ‘ট্রান্সফরমার বাবদ কোনো টাকা নেওয়া হয় না। ট্রান্সফরমার নষ্ট হওয়ার দুদিন পরেই সেখানে বিকল্প ট্রান্সফরমার দেওয়া হয়েছে। এই এলাকার কারো কাছেই ট্রান্সফরমার স্থাপনের জন্য টাকা চাওয়া হয়নি। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নামে কেউ চাঁদা তুললে এর দায়ভার তাঁকেই নিতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘টাকা নিয়েছি, ফেরত দেব।’
জেলা প্রশাসক অমল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, ‘এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত কমিটি করা হবে। বিষয়টির সত্যতা পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’