সাবেক প্রতিমন্ত্রী ফকিরের হুমকি
‘নাইলে পিটনি খাইবেন’
সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ও ময়মনসিংহের গৌরীপুরের সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন (অব.) মুজিবুর রহমান ফকির ময়মনসিংহে এনটিভির নিজস্ব প্রতিবেদক আইয়ুব আলীকে হুমকি দিয়েছেন। আজ সোমবার মুঠোফোনে তিনি এ হুমকি দেন।
এনটিভি ও এনটিভি অনলাইনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোরশেদুজ্জামান সেলিমকে কুপিয়ে আহত করার খবরটি প্রকাশিত হওয়ার পর ওই হুমকি দেন মুজিবুর রহমান। “এমপি ফকিরের গুণ্ডাদের কোপে কেন্দ্রীয় আ. লীগ নেতা আহত” শীর্ষক প্রতিবেদনটি আজ প্রকাশিত হয়। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক মোরশেদুজ্জামান সেলিম এ হামলার জন্য মুজিবুর রহমান ফকিরের ‘গুণ্ডাদের’ দায়ী করেন। urgentPhoto
আজ রোববার বেলা ১১টা ৩ মিনিটে ময়মনসিংহে এনটিভির নিজস্ব প্রতিবেদক আইয়ুব আলীকে ফোন করে মুজিবুর রহমান ফকির বলেন, ‘শোনেন আইয়ুব আলী সাহেব। গৌরীপুরে কিছু হলে আপনি এত উৎসাহী হয়ে যান কেন?’
আওয়ামী লীগের ওই সংসদ সদস্য বলে চলেন, ‘না না আপনি আমার কথা শুনেন। আপনার সম্পর্কে আমার স্টাডি কি জানেন? আপনি ভেতরে জামায়াত, ওপরে বিএনপি, ঠোঁটের আগায় আওয়ামী লীগ। নাইলে পিটনি খাইবেন, এই জন্য। আপনারে আমি চিনি তো। আপনার বস ফোন করেছিল (অশালীন উক্তি করে) .... ছিড়ুক গা যাইয়া। যারা নৌকা করে নাই, তাদের একটা একটা করে ঠিক করা হবে, এই নিউজটা আমি আপনারে দিয়া দিলাম। যারা আওয়ামী লীগ করে না তারা এন্টি আওয়ামী লীগ। আর আপনি এন্টি আওয়ামী লীগ।’
এনটিভির প্রতিবেদককে 'উপদেশ' দিয়ে মুজিবুর রহমান ফকির বলেন, ‘আপনে একটু বাড়াবাড়ি কম করেন। আপনার মোবাইল ট্রেকিং করেছি তো আমি। আপনি ভেতরে জামায়াত, ওপরে বিএনপি, ঠোঁটের আগায় আওয়ামী লীগ। আপনে আসলে আওয়ামী লীগের লোক না, জামায়াতের লোক। থাকেন তো ওই ফিরোজ লাইব্রেরি মোড়? আমি সব খবর রাখি। আপনি দল করেন না মানে আপনি অ্যান্টি আওয়ামী লীগ। যারা দল করে না তারা অ্যান্টি আওয়ামী লীগ।’
এর আগে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতা মোরশেদুজ্জামান সেলিমের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সকালে এনটিভি অনলাইনের ঢাকা কার্যালয় থেকে মুজিবুর রহমান ফকিরের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। মুঠোফোনে তিনি দুর্ব্যবহার ও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘আমাকে পুরো ব্যাপারটি জানতে হবে। এরপরেই মন্তব্য করতে পারব। এর আগে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ব্যাপারটি আমি শুনেছি। সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়া উচিত না। এ রকম কিছু যদি ঘটে থাকে, তাহলে এ ব্যাপারে কথা হবে। আর সেলিমকে মারার বিষয়টি নিয়ে আমরা বসব।’
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নাজিম উদ্দিন আহমেদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এমপি সাহেব (মুজিবুর রহমান ফকির) আগে এমন ছিলেন না। প্রতিমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তাঁর একবার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত অসুখ হয়েছিল।
এর পর থেকে তিনি এমন হয়ে গেছেন। অসুস্থ হওয়ার পর তাঁর মাথায় সমস্যা দেখা দিয়েছিল।’
নাজিম উদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, ‘অসুখের কারণে এ ধরনের কাজ করতেছেন, আগে করতেন না। আর উনি তো এমপি, ওনারে বাদও দেওয়া যায় না। তাঁকে কিছু বলাও যায় না, এমনভাবেই নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে গেছেন তিনি।
পরিবারে কেউ যদি একটু ইয়ে থাকেন, তাকে নিয়ে টেনশন করেন সবাই। এমপি সাহেবকে নিয়েও আমরা সবাই টেনশন করি।’
জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হোসাইন জাহাঙ্গীর বাবু বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। তবে আপনারা বোধহয় জানেন, গৌরীপুরে এ ধরনের ঘটনা তো অনেকদিন ধরেই ঘটে চলছে। এর আগে শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন আহাম্মদকে দিগম্বর করে এলাকায় ঘোরানো এবং পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সজীবকে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন কারণে ওই এলাকার এমপি মুজিবুর রহমান ফকিরের বাহিনীর হাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলেও আমাদের কাছে সংবাদ আছে। এখন আপনার কাছে সাংবাদিককে হুমকি দেওয়ার খবরটি শুনলাম। এটা যদি সত্যি হয়ে থাকে এবং এনটিভির সাংবাদিককে ওনার নম্বর থেকে হুমকি দেওয়া হয়ে থাকে, তবে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই আমি।’
গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। যদিও আমি আপনার মুখেই প্রথম শুনলাম। হুমকি দেওয়া ঠিক হয় নাই।’
ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মইনুল হক বলেন, ‘এমন ঘটনা ঘটে থাকলে আইনের বিধান অনুযায়ী ওনার সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা উচিত। জিডি করার পর আমরা তদন্তসাপেক্ষে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’