দুধের শিশুকে নিয়ে ১০ দিন-১০ রাত হেঁটে বাংলাদেশে
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর চলছে দেশটির সেনাবাহিনীর নিধন ও অত্যাচার। তাদের হাত থেকে বাঁচতে শুধু প্রাণটা সম্বল করে বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে ছুটে আসছে লাখো রোহিঙ্গা। তাদেরই একজন মোহসেনা। ১২ দিনের দুধের শিশুকে কোলে করে হেঁটে পাড়ি দিয়েছেন দুর্গম পথ। পার হয়েছেন উত্তাল সাগর। ক্লান্তিকর ও বিপদসংকুল এই পথ পাড়ি দিতে সময় লেগেছে দশদিন, দশরাত।
দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আজ রোববার জীবন কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং এলাকায় পৌঁছান মোহসেনা। সেখান থেকে এনটিভির কাছে তুলে ধরেন তাঁর ‘অভিশপ্ত’ জীবনের কথা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১২ দিনের নবজাতককে নিয়ে টেকনাফের রাস্তার ধার ঘেষে বৃষ্টির পানিতে ভেজা খুপরি ঘরে বসে আছে মোহছেনা। শিশুটির জন্ম আরাকানে। কিন্তু নিশৃংসতার ভয়ে দুদিনের শিশু জীবনের কথা চিন্তা করে কখনো হেঁটে কখনো বা উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে পালিয়ে আসেন মোহসেনা। এ কয়দিনের ঘটনা মনে করে এখনো আঁতকে উঠছেন তিনি।
ভেজা চোখে মোহছেনা এনটিভি অনলাই্নকে জানান, রাখাইনে তাঁদের ধরে নিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হচ্ছে। আগুন দিয়ে ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
মোহছেনার মতো কুতুপালংয়ে রয়েছেন অনেকেই। গতকাল রাতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে পালিয়ে এসেছে তারা। সেখানেই কাদা-জলের মধ্যে বেঁচে থাকার স্বপ্ন নিয়ে বাঁধছে ঘর।
এ বিষয়ে শফিউল নামের একজন রোহিঙ্গা বলেন, ‘ওখানে আমাদের ওপর গুলি মারা হচ্ছে। থাকতে না পেরে বাংলাদেশে চলে এসেছি।’
মাসুমা খাতুন নামের আরেক রোহিঙ্গা নারী বলেন, ‘ওখানে আমাদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে। তাই চলে এসেছি।’
এদিকে রোহিঙ্গাদের অতিরিক্ত চাপের কারণে বেড়ে গেছে উখিয়ার কুতুপালং এলাকার নিত্যপণ্যের দাম। ফলে স্থানীয়দের পড়তে হচ্ছে বিপাকে।
এ বিষয়ে আইয়ুব হোসেন নামের স্থানীয় একজন এনটিভিকে বলেন, বাস ভাড়া যেখানে পাঁচ টাকা ছিল তা ২৫ থেকে ৩০ টাকা করে নিচ্ছে। এ ছাড়া চাল, ডাল, তরকারিসহ নিত্যপণ্যের দাম অনেক বেশি। চালের দোকানে গেলে চাল পাওয়া যায় না। চায়ের দোকানে গেলে চা পাওয়া যায় না। বিশেষ করে হাসপাতালগুলোতে কোনো চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে না।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. জসিম জানান, রোহিঙ্গা আসায় বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। কয়েকদিন আগেও কুতুপালং এলাকার চিত্র এমন ছিল না। অথচ অতিরিক্ত রোহিঙ্গার চাপ স্থানীয়দের ওপর প্রভাব ফেলছে। স্থানীয়রাও চায় রোহিঙ্গারা নিজেদের দেশে ফিরে যাক। এতে বাজারে ফিরে আসবে স্বস্তি।