সরকারের ২০০ বস্তা চাল মিলল ব্যবসায়ীর গুদামে
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে ২০০ বস্তা চাল (প্রায় ১০ টন) পাচার করে এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্যবসায়ীর গুদাম থেকে ওই চাল জব্দ করেন র্যাবের নেতৃত্বাধীন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এ ঘটনায় খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিনসহ তিনজনকে আটক করেছে র্যাব। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে খাদ্য অধিদপ্তর।
র্যাব ৬-এর ঝিনাইদহ ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর মনির আহম্মেদ সাংবাদিকদের জানান, গতকাল বুধবার বিকেলের দিকে তাঁরা খবর পান, চালের পাইকারি দোকান স্থানীয় মধু এন্টারপ্রাইজের গুদামে সরকারের খাদ্য অধিদপ্তরের সিলযুক্ত ২০০ বস্তা চাল বিক্রির জন্য মজুদ করে রাখা আছে। সেখান থেকে তাঁরা মধু এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. ওলিয়ার রহমানের ব্যবস্থাপক রাকিব উদ্দিন ও কর্মচারী কিবরিয়াকে আটক করেন। এরপর বেরিয়ে আসে সরকারি খাদ্যগুদামের চাল অবৈধভাবে বিক্রি ও পাচারের সঙ্গে জড়িতদের নাম। আজ বেলা ১টার দিকে র্যাব সদস্যদের নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত ফের সেখানে অভিযান শুরু করেন। এরপর জব্দ করা হয় ২০০ বস্তা সরকারি চাল। জব্দ করা চাল জেলা সদরের খাদ্যগুদাম থেকে বিক্রি করা হয়েছে বলে তাঁরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হন। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সদর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিনকে আটক করা হয়। তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। এ সময় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকসহ খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ঝিনাইদহ সদর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন। ছবি : এনটিভি
এ বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির সাংবাদিকদের জানান, মধু এন্টারপ্রাইজ নামের একটি চালের দোকান থেকে খাদ্য অধিদপ্তরের সিলযুক্ত ২০০ বস্তা সরকারি চাল জব্দ করা হয়েছে। যার ওজন প্রায় ১০ টন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরো জানান, মধু এন্টারপ্রাইজে খাদ্য অধিদপ্তরের সিলযুক্ত সরকারি চাল বিক্রি হচ্ছে, এমন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়।
এদিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. হাসান মিয়া বলেন, বিকেল ৪টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে মুচলেকা দিয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের জিম্মায় সদর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিনকে জামিনে মুক্ত করা হয়েছে। তদন্ত শেষে জসিমের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বলেন, বুধবার জেলা শহরের সদর খাদ্যগুদাম থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর (পুলিশ ও আনসার) রেশনের চাল বিতরণ করা হয়। রেশনের এই চাল সাধারণত চাল ব্যবসায়ীরা কিনে থাকেন। বাজার চড়া থাকায় এই চাল কেনা নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এই কারণে এই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
ঝিনাইদহ শহরের মধু এন্টারপ্রাইজে মজুদ করা সরকারি চাল। ছবি : এনটিভি
যোগাযোগ করা হলে সদর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বলেন, খাদ্যগুদামের খাতাপত্র ঠিকঠাক রয়েছে। চাল ব্যবসায়ী ওলিয়ার রহমান চালান দেখালে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে বলে দাবি করেন তিনি।
আজ রাত ৮টার দিকে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. বাবুল হোসেন র্যাব কর্মকর্তা মেজর মনির আহম্মেদের বরাত দিয়ে বলেন, র্যাবের পক্ষ থেকে সদর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জসিম, চাল ব্যবসায়ী ওলিয়ার রহমান, তাঁর ব্যবস্থাপক রাকিব উদ্দিন ও কর্মচারী কিবরিয়াকে আসামি করে থানায় মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।
বাবুল হোসেন আরো জানান, ভারত থেকে আমদানি করা চাল গুদামে জরুরি সংরক্ষণের প্রয়োজনে লিখিতভাবে সদর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তিনি নিজ জিম্মায় জামিন নিয়েছেন। চলমান খাদ্য পরিস্থিতিতে এ ধরনের ঘটনায় বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বলেন, সদর খাদ্যগুদামে চাল ও গম মজুদ ঠিক আছে কি না তা দেখার জন্য কালীগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আসাদুজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন শৈলকুপা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোজাম্মেল হক ও সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. হাসান মিয়া। এ ছাড়া তাঁরা জসিম উদ্দিনের ভূমিকাও খতিয়ে দেখবেন।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে যোগাযোগ করা হলে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক শেখ বলেন, এখন পর্যন্ত র্যাবের পক্ষ থেকে মামলা দেওয়া হয়নি।