‘আঁরে দুয়া বাত দাও’
ঈদের দিন গত ২ সেপ্টেম্বর বাড়ি ছেড়েছেন তিনি। মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সীমান্তের কাঁটাতার পেরিয়ে নো ম্যানস ল্যান্ডের বর্তমান এলাকায় আসতে আটদিন লেগেছে কবির আহমদ ও তাঁর পরিবারের।
মিয়ানমারের সেনাদের নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে অন্য রোহিঙ্গা পরিবারের সঙ্গে দেশ ত্যাগ করেছেন কবির। তিনি জানালেন, সেই গত ২ সেপ্টেম্বরের পর থেকে আর ভাত খাওয়া হয়নি তাঁর। একটু ভাত খেতে চান। বাড়ি ছাড়ার পর থেকে আর ভাত খেতে পারেননি তিনি।
কবির বলেন, ‘আত্তি ভুক লাইগসে। বাত না হাইদ্দে। আঁরে দুয়া বাত দাও।’ স্থানীয় এক ব্যক্তি বুঝিয়ে দিলেন তাঁর ভাষা। তিনি ভাত খাননি। তিনি ভাত চান।
যেসব পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে তার একটি নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমঘুম সীমান্ত এলাকা। এলাকাটি বান্দরবান জেলায়। তমব্রু নামে ছোট একটা নদী বয়ে গেছে ওই এলাকায়। ওই নদীর তীরে নো ম্যানস ল্যান্ড। নদীর ওপারে কিছু দেখাই যায় কাঁটাতারের বেড়া। বেড়ার ওপারই মিয়ানমার।
ঘুমধুমের ওই এলাকায় তমব্রু নদীর এক তীরে কালো পলিথিন দিয়ে ঘর বানিয়ে থাকছে প্রায় এক হাজার ২০০ পরিবার। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) এক সদস্য জানালেন, নো ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছে পরিবারগুলো।
উখিয়া, টেকনাফ ও কক্সবাজারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অন্যান্য অস্থায়ী ক্যাম্পের সঙ্গে ওই ক্যাম্পটির পার্থক্য ওই জায়গায়। পার্থক্য আরো একটি জায়গায় আছে। অন্যান্য ক্যাম্পে পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছায়। কিন্তু এ ক্যাম্পে তেমন ত্রাণ আসে না।
আজ বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা গেল, তমব্রু নদীতে খেলছে রোহিঙ্গা শিশুরা। নদীতে হাঁটু পানিও নাই। সহজেই এপার, ওপার করছে। তবে বাংলাদেশের দিকে একটি নির্দিষ্ট জায়গার পর প্রবেশ করতে হলে তাদের বিজিবির অনুমতি নিতে হয়।
ত্রাণ আসে না এখানে? কবির জানালেন, চিড়া আসে। এতদিন ধরে প্রতিদিন চিড়া খাচ্ছেন তিনি। আজ ত্রাণ বা কোনো সাহায্য পেয়েছেন? তিনি জানান, সকালে আধা কেজি চিড়া ও আধা পোয়া চিনি পেয়েছেন। এ দিয়ে চলছে কবিরের পরিবার।
পরিবারে কতজন আছে? কবির জানালেন, তাঁর ১৩ জনের পরিবার। কিন্তু বাংলাদেশে এসেছেন তাঁরা পাঁচজন। কবিরের এক সন্তান নিহত হয়েছে মিয়ানমারের সেনাদের গুলিতে। অন্য পাঁচজন সন্তান এখনো নিখোঁজ। কিছু জমি ছিল তাঁর নিজের গ্রামে। ঘর আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ায় দলিলপত্রও পুড়ে গেছে। কিন্তু পেটের ক্ষুধা কবিরকে যেন ভুলিয়ে দিয়েছে স্বজন হারানোর বেদনা। একটু ভাত খেতে চান তিনি। নিজ দেশে থাকতে তিনবেলা ভাত খেতেন তিনি। ১২ দিন ধরে চিড়া, চিনি দিয়ে জীবন চলছে তাঁর। আর পারছেন না।
কবির জানালেন, তিনি শুনেছেন অন্য এলাকায় ত্রাণসামগ্রী যাচ্ছে অনেক। কিন্তু তমব্রু নদীর তীরে বড় ধরনের ত্রাণসামগ্রী আসে না। চাল যদি আসে, তবে তিনি পেট ভরে ভাত খাবেন।