রোহিঙ্গাদের জন্য শিখদের লঙ্গরখানা, প্রতিদিন খাবে ৩৫ হাজার
মিয়ানমার থেকে সেনাবাহিনীর নির্যাতনে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রতিদিন ৩৫ হাজার খাবার দিচ্ছে ভারতের শিখ ধর্মাবলম্বীদের স্বেচ্ছাসেবক সংস্থা ‘খালসা এইড’। এ লক্ষ্যে ‘গুরু কা লঙ্গর’ নামের একটি ক্যাম্পও খুলেছে তারা।
গতকাল বুধবার বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে অনুমতি পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার টেকনাফের শাহপুরি দ্বীপে ওই ক্যাম্প খোলা হয় বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
তিনদিন আগে ভারত থেকে বাংলাদেশে পৌছায় শিখ ধর্মাবলম্বীদের স্বেচ্ছাসেবক সংস্থাটি। তখন থেকেই তারা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে প্যাকেটজাত খাবার বিতরণ করে আসছিল।
এ বিষয়ে খালসা এইডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অমরপ্রীত সিং ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘আজ থেকে আমরা খাবার রান্না ও বিতরণ শুরু করেছি। বুধবার আমরা চাল, সবজি ও আনুষঙ্গিক কাঁচামাল কিনেছি এবং বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়েছি। আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য প্রতিদিন ৩৫ হাজার খাবার সরবরাহ করা। যদিও, প্রতিনিয়ত বেড়ে চলা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেখে মনে হচ্ছে এই খাবার যথেষ্ট হবে না।’
অমরপ্রীত আরো বলেন, ২৫ আগস্টের পর থেকে কমপক্ষে তিন লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। প্রতিদিন সবাইকে খাওয়ানো প্রাথমিকভাবে ‘গুরু কা লঙ্গরের’ জন্য দুরূহ। রোহিঙ্গারা তীব্র খাদ্য সংকটের মধ্যে রয়েছে। শিশুরা রাস্তায় খাবার ভিক্ষা করে বেড়াচ্ছে। তাদের অবস্থার দিন দিন অবনতি হচ্ছে।
এদিকে বুধবার খাবার রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চড়া দামে কিনতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেন খালসা এইডের স্বেচ্ছাসেবকরা।
গত ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে একসঙ্গে ২৪টি পুলিশ ক্যাম্প ও একটি সেনা আবাসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। ‘বিদ্রোহী রোহিঙ্গাদের’ সংগঠন এআরএসএ এই হামলার দায় স্বীকার করে।
এ ঘটনার পর মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে। সেখান থেকে পালিয়ে আসার রোহিঙ্গাদের দাবি, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নির্বিচারে গ্রামের পর গ্রামে হামলা-নির্যাতন চালাচ্ছে। নারীদের ধর্ষণ করছে। গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে।
মিয়ানমার সরকারের বরাত দিয়ে জাতিসংঘ গত ১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, মিয়ানমারে সহিংসতা শুরুর পর গত এক সপ্তাহে ৪০০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৭০ জন ‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী’, ১৩ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, দুজন সরকারি কর্মকর্তা এবং ১৪ সাধারণ নাগরিক। জাতিসংঘের জরিপ অনুযায়ী ২৫ আগস্টের পর থেকে প্রায় তিন লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।