প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন দাবি ভূমিহীনদের
ভূমিহীনদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় সাতক্ষীরা কৃষকবধূ জায়েদা তাঁর জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়েছেন। এমন মন্তব্য করে ভূমিহীন আন্দোলন নেতারা বলেছেন, কোনো আন্দোলন যেমন বৃথা যায় না তেমনি ভূমিহীনদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনও বৃথা যাবে না। তাঁরা বলেছেন, ভূমিহীন আন্দোলন শেষ হয়ে যায়নি। এ আন্দোলন চলবে যত দিন অধিকার আদায় না হবে।
ভূমিহীনদের মধ্যে খাসজমি বিতরণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ গত ১৭ বছরেও পুরোপুরি বাস্তবায়িত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তারা বলেন, ভূমিহীনদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন চলবেই। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার ফাঁদে ফেলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ও সদিচ্ছাকে পাশ কাটিয়ে কেউ ফায়দা লুটতে চাইলে তাকে প্রতিহত করা হবে। তাঁরা ভূমিহীনদের বিরুদ্ধে যেকোনো ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়া হবে বলেও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
দেশখ্যাত সাতক্ষীরার দেবহাটা কালীগঞ্জ ভূমিহীন আন্দোলনের কৃষকনেত্রী শহীদ জায়েদা খাতুনের ১৭তম শাহাদাত বার্ষিকীতে আয়োজিত স্মরণ সভায় এসব কথা বলেন ভূমিহীন নেতারা।
ভূমিহীন উচ্ছেদ প্রতিরোধ সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি ভূমিহীন নেতা ওহাব আলী সরদারের সভাপতিত্বে আজ সোমবার বিকেলে জায়েদানগরে অনুষ্ঠিত স্মরণ সভায় বক্তৃতা করেন তালা কলারোয়া আসনের সংসদ সদস্য জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম, কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ ওয়াহেদুজ্জামান, কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহমেদ, দৈনিক কালের চিত্র সম্পাদক ও সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক আবু আহমেদ, অধ্যাপক আনিসুর রহিম, অধ্যক্ষ নাদিয়া পারভিন, শ্যামল সিংহ রায়, শেখ সেলিম আকতার স্বপন, অ্যাডভোকেট পুলিন বিহারী সরকার, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুর রহমান সেলিম, ভূমি কমিটি নেতা কামরুল ইসলাম, মোশাররফ হোসেন, শরিফুল্লাহ কায়সার সুমন, আবদুস সামাদ প্রমুখ।
বক্তারা খাসজমি ভূমিহীনদের মধ্যে বিতরণ করে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবি জানান। বিশাল এই ভূমিহীন সমাবেশে ভূমিহীন আন্দোলনের পুরোধা প্রয়াত অ্যাডভোকেট আবদুর রহিম, সাইফুল্লাহ লস্কর, আশরাফুল আলম টুটু ও অ্যাডভোকেট ফিরোজ আহমেদকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়।
বক্তারা ভূমিহীনদের আত্মত্যাগকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে আরো বলেন, রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অন্তরায় দূর করা হবে। তাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে নেতারা বলেন, ভূমিহীনদের উচ্ছেদ ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে ভূমিহীন জনপদ যেকোনো সময় আবারও জেগে উঠবে।
১৯৯৮ সালের ২৭ জুলাই দেবহাটা কালীগঞ্জ এলাকায় খাসজমির আন্দোলনের একপর্যায়ে বাবুরাবাদ গ্রামের কৃষকবধূ জায়েদা খাতুন পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এরপর থেকে এ এলাকা জায়েদানগর ভূমিহীন জনপদ নামে পরিচিতি লাভ করে। এ ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেবহাটার দেবীশহর ময়দানে এসে বিশাল জনসভায় ভূমিহীনদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে খাসজমি ভূমিহীনদের মধ্যে বিতরণের ঘোষণা দেন। একই সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন প্রমুখ জাতীয় নেতা ভূমিহীন আন্দোলনকে স্বাগত জানিয়ে ভূমিহীনদের অধিকার আদায়ে তাঁরাও এক ও অভিন্ন মত প্রকাশ করেন। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা অনুযায়ী ভূমিহীনদের মধ্যে খাসজমি বিতরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়।
সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ভূমিহীনদের হাতে জমির দলিল হস্তান্তরও করা হয়। এখন পর্যন্ত এক হাজার ৯০০ পরিবারের মধ্যে খাসজমি বিতরণ করা হলেও এখনো পাঁচ শতাধিক পরিবার এ জমি পায়নি বলে জানান ভূমিহীনরা।