পঞ্চগড়ে বিজিবির নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বড়শশী সীমান্ত এলাকায় বিজিবির নির্যাতনে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁর নাম মাজম আলী (৪০)। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্যসহ স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে বিজিবির সদস্যদের নির্যাতনে তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি জানা গেছে।
গতকাল শুক্রবার রাতে জেলার বোদা বড়শশী সীমান্তে এ ঘটনা ঘটেছে। মাজম আলী ওই ইউনিয়নের নুরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। এ ঘটনায় বোদা থানায় একটি অপমৃত্যুর (ইউডি) মামলা হয়েছে। পুলিশ গভীর রাতে মাজম আলীর লাশ উদ্ধার করে বোদা থানায় নিয়ে আসে। সকালে ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন বিক্ষোভ মিছিল এবং দোষী বিজিবি সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ও পরিবারের দাবি, নীলফামারী ৫৬ বিজিবির আওতাধীন বড়শশী বিওপির সদস্যরা মাজমকে সন্ধ্যায় ক্যাম্পে ধরে নিয়ে গিয়ে বেদম মারধর করেন। সেখান থেকে বাড়ি নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্য হয়।
গত বৃহস্পতিবার বড়শশী সীমান্ত দিয়ে পাঁচটি ভারতীয় গরু চোরাই পথে আনা হয়েছে, এমন খবরে শুক্রবার সন্ধ্যায় একসময়ের গরু ব্যবসায়ী মাজম আলীকে তাঁর বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান বড়শশী ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা। ক্যাম্পে নিয়ে শুরু করেন মারধর। এ সময় বিজিবি সদস্যরা তাঁর মুক্তিপণস্বরূপ একটি গরু দাবি করেন প্রথমে। তা দিতে অস্বীকার করলে ওই ক্যাম্পের বিজিবি সদস্য লুৎফর রহমানসহ চার-পাঁচজন জওয়ান তাঁকে বেদম মারধর করেন। মারধরের একপর্যায়ে মাটিতে পড়ে যান মাজম। মাটিতে পড়ে গেলেও বুট দিয়ে তাঁর পেট ও বুকে আঘাত করেন বিজিবির সদস্যরা। পরে মাজমের ছোট ভাই সোলেমান নিজেদের একটি গরু ক্যাম্পে দিয়ে গুরুতর আহত মাজমকে উদ্ধার করে ঘাড়ে করে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হন। পথেই মারা যান মাজম।
মাজমের মৃতুতে তাঁর পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নির্বাক হয়ে গেছে তাঁর স্ত্রী, মা, চার সন্তানসহ স্বজনরা।
নিহত মাজমের মা ছবিরন খাতুন আহাজারি করে বলেন, ‘আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে লাশ বানাইয়ে ফেরত দিল। আমি গরিব মানুষ, আমি সরকারের কাছে বিচার চাই।’
মাজমের স্ত্রী মোমেনা খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামীকে বিনা দোষে বিজিবি সদস্যরা পিটিয়ে হত্যা করেছে। আমি এখন সন্তানদের নিয়ে কীভাবে বাঁচব। আপনারাই এর বিচার করেন।’
নিহতের ছোট ভাই সলেমান আলী বলেন, ‘বিজিবি সদস্যরা আমার বড় ভাইকে ধরে নিয়ে গিয়ে বেদম মারপিট করে। পরে তার মুক্তিপণ হিসেবে একটি গরু দাবি করে। আমি তাদের একটি গরু দিয়ে ভাইকে ক্যাম্প থেকে নিয়ে আসার পথেই সে মারা যায়।’ মাজমের বড় ভাই মোহর আলীও একই কথা জানিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা জয়নুল হক ও জহিরুল ইসলাম খলিফা জানান, মাজমকে বাড়ির পাশ থেকে ক্যাম্পে ধরে নিয়ে গিয়ে মারধর করার কথা তাঁরা শুনেছেন। বিজিবি দুষ্কৃতকারীদের ধরে আইনের হাতে সোপর্দ করবে। আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে কাউকে মারপিট করবে, এটা ঠিক না।
বড়শশী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমার সামনেই বিজিবি সদস্যরা তাকে মারপিট করেন। আমি কাছে গিয়ে ইউপি সদস্য পরিচয় দিলে তারা আমাকে চলে যেতে বলে। আমি দেখেছি, মাজম বিজিবি সদস্যদের পা জড়িয়ে ধরেছিল। তবুও তারা তাকে মারপিট করছিল। আমাকেও ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। এ এলাকার অসংখ্য মানুষ দরিদ্র কৃষকের ওপর বিজিবির এই বর্বর নির্যাতন দাঁড়িয়ে থেকে দেখেছে। ওই বিজিবি সদস্যদের অপসারণ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত।’
বোদা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু সায়েম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মাজম আলীর লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। শনিবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় বোদা থানায় একটি ইউডি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে মামলা নেওয়া হবে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর মিজানুর রহমান খান মোবাইল ফোনে বলেন, ভারতীয় গরু নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় বিজিবি সদস্যরা তাঁকে ধাওয়া করে। পরে তিনি শুনেছেন বাসায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে। বিজিবি তাঁকে আটক বা নির্যাতন কোনোটাই করেনি। তবে হৃদরোগে আক্রান্ত (হার্ট অ্যাটাক) তাঁর মৃত্যু হতে পারে বলে জানান তিনি।