এসআই প্রত্যাহার, তদন্ত কমিটি
হবিগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধার জানাজায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়ার সময় জাতীয় পতাকা না দেওয়ায় বানিয়াচং থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুর রহমানকে প্রত্যাহার (ক্লোজড) করা হয়েছে। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আজ রোববার এসব কথা জানান বানিয়াচং সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৈলেন চাকমা। তিনি জানান গত শুক্রবার থেকে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর সকাল ৭টায় বানিয়াচং উপজেলার খাগাউড়া ইউনিয়নের তাজপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে মারা যান মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক। বিকেল ৩টায় নিজ বাড়িতেই জানাজা সম্পন্ন করা হয়। পরে ৩টা ১০ মিনিটে তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়া হয়। রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদানের সময় তাঁর কফিনের ওপর জাতীয় পতাকার পরিবর্তে বিছানার চাদর দেওয়া হয়।
আবদুল হকের ছেলে মিজানুর রহমান অভিযোগ করেন, গার্ড অব অনার প্রদানের সময় পুলিশ নিয়মমাফিক কোনো ফাঁকা গুলিবর্ষণ করেনি। তাঁদের পরিবারে কোনো আর্থিক অনুদানও দেওয়া হয়নি।
এসব বিষয় নিয়ে গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন মিজানুর রহমান।
এরপরই বিষয়টি নিয়ে দুটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়।
জেলা প্রশাসনের এক সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রধান হচ্ছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তারেক জাকারিয়া। পুলিশের গঠন করা এক সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রধান হচ্ছেন বানিয়াচং সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৈলেন চাকমা।
এলাকায় তদন্ত করছেন বানিয়াচং সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৈলেন চাকমা। ছবি : এনটিভি
বানিয়াচং সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৈলেন চাকমা এনটিভিকে বলেন, ‘জাতীয় পতাকা উপজেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড থেকে দেওয়া হয়। পতাকা সংগ্রহ পুলিশের কাজ নয়। তারপরও আমরা তদন্ত করছি। তদন্তের স্বার্থে গার্ড অব অনারের দায়িত্বে থাকা বানিয়াচং থানার এসআই আবদুর রহমানকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে।’
জেলা প্রশাসক মণীষ চাকমা বলেন, ‘জাতীয় পতাকার বদলে কেন বিছানার চাদর দেওয়া হলো এতে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কোনো গাফিলতি আছে কি না, তা তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তারেক জাকারিয়াকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দেবে।’
জেলা প্রশাসক মণীষ চাকমা বলেন, ‘আলোচিত মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে কনফিউশন আছে। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি তাদের মন্তব্য কলামে লিখেছে ওই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন রাজাকার। আবার গেজেটে আছে মুক্তিযোদ্ধা। এ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও যেহেতু গার্ড অব অনার দিতে গেছে সেহেতু তাঁকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্মান করতে হবে।’
এ ব্যাপারে বানিয়াচং উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি আমির হোসেন মাস্টার বলেন, ‘গত ১৯ এপ্রিল প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি থেকে সাতজনকে অমুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই সাতজনের মধ্যে একজন হলেন আবদুল হক। তিনি একজন রাজাকার ছিলেন। এরপরও তিনি কীভাবে ভাতা পেয়েছেন এমন প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামায় দস্তখত রেখে তাঁকে ভাতা দেওয়া হয়েছে।’ বানিয়াচং উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার আব্দুল খালেক মাস্টারও একই কথা বলেন।
এ ব্যাপারে মরহুম মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হকের ছেলে মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমার কাছে সাবেক কমান্ডার আব্দুল খালেক মাস্টার দুই লাখ টাকা দাবি করেন। এই টাকা না দেওয়ায় আমার বাবাকে রাজাকার বানানোর চেষ্টা করছেন তিনি।’
স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে আবদুল হক তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আমলে ইস্ট বেঙ্গল রাইফেল (ইপিআর) বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তিনি বাড়ি চলে আসেন। এ ব্যাপারে একই এলাকার সন্দলপুর গ্রামের (বর্তমানে তাজপুর) মুক্তিযোদ্ধা সাহিদ মিয়া বলেন, ‘আবদুল হক একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আব্দুল হকও ভাতা পেয়েছেন, আমিও ভাতা পেয়েছি।’