ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা : মামলা নিল পুলিশ
পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার স্কুলছাত্রী সোনিয়া আত্মহত্যার ঘটনায় অবশেষে মামলা নিয়েছে পুলিশ। ঘটনার পাঁচদিন পর আজ শনিবার দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি রেকর্ড করা হয়।
সোনিয়ার মা সেলিনা আক্তার বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওয়ার্ডবয় মনসুর আলম রাজন (৩২) এবং বাংলালিংকের কর্মকর্তা আতিকুর রহমান আতিককে (৩৪) আসামি করা হয়েছে।
তবে এখনো সেই রাজন ও আতিককে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ওই ছাত্রীর আত্মহত্যার পর থেকেই তাঁরা দুজন পলাতক।
এদিকে, ঘটনার সম্পর্কে জানতে পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. গিয়াসউদ্দিন ঘটনাস্থল ও সোনিয়ার স্কুল পরিদর্শন করেছেন।
সোনিয়ার স্বজনরা জানান, সোনিয়ার মা অসুস্থ হয়ে বাড়িতে পড়ে আছেন। তিন মাস আগে তার মায়ের জন্য ওষুধ দেওয়ার কথা বলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওয়ার্ডবয় রাজন তাকে বাংলালিংকের কর্মকর্তা আতিকের বাসায় নিয়ে যান। সেখানে প্রথমে রাজন ও পরে আতিক তাকে ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ করেন। এরপর বিষয়টি কাউকে জানালে ভিডিও অনলাইনে ছেড়ে দেওয়াসহ হত্যার হুমকি দিয়ে তিন মাস ধরে ওই ছাত্রীকে বিভিন্ন সময় ধর্ষণ করে আসছিলেন তাঁরা। গত ৯ অক্টোবর ওই ছাত্রী বিষয়টি তার মা ও মামাকে জানায়। এ ঘটনার পর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ওই ছাত্রীকে বিষয়টি ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দিতে থাকেন রাজন ও আতিক। একপর্যায়ে ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করে।
পরিবারের অভিযোগ, ওই ছাত্রী আত্মহত্যার পর গত ১০ অক্টোবর থেকে ১৩ অক্টোবর রাত পর্যন্ত তার মা সেলিনা আক্তার থানায় একাধিকবার মামলা করতে গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি।
সোনিয়ার বাবা জাহেরুল ইসলাম ও মা সেলিনা আক্তার বলেন, ‘ঘটনার দিনই আমরা থানায় গিয়েছিলাম মামলা করতে। থানার ওসি আমাদের বলেছেন, ময়নাতদন্ত রিপোর্টের পর প্রয়োজনে মামলা নেওয়া হবে। পরদিন বুধবার আবারও থানায় যাই, দুই থেকে তিন ঘণ্টা থাকার পর তিনি আমাদের মুখের কথা শুনে আবার একই কথা বলেন। প্রতিদিন আমরা থানায় ঘুরতে থাকি মামলার জন্য।’
সেলিনা আক্তার বলেন, ‘আমি আর কিছু চাই না। যারা আমার মেয়েকে নির্যাতন করেছে। যাদের জন্য আমার ফুলের মতো মেয়েটা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। আমি তাদের এমন বিচার চাই, যাতে আর কারো মেয়েকে এভাবে মরতে না হয়।’
সোনিয়ার মামা ফারুক হোসেন জানান, তেঁতুলিয়া থানার পুলিশ প্রথমদিকে অপমৃত্যুর (ইউডি) মামলা করেছিল। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত নতুন করে আর কোনো মামলা নেওয়া হবে না জানিয়ে বাদীপক্ষকে ঘুরাচ্ছিল। অথচ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়াই শনিবার সকালে পুলিশ মামলা নেয়।
স্থানীয় মোজাফফর হোসেন জানান, তাঁদের দাবি আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়।
তবে দেরিতে মামলা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তেঁতুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরেশ চন্দ্র বলেন, তিনি অপমৃত্যুর মামলার আইন পড়ে জেনেছেন যে এ ধরনের মামলা হলেও একই ঘটনায় অন্য মামলা নেওয়া যায়। তাই মামলা নেওয়া হয়েছে।