সাতক্ষীরায় বিশ্ব বাঘ দিবস পালিত
বন্যপ্রাণীর সঙ্গে নির্মম ও নিষ্ঠুর আচরণ নয় বরং তাদের আদর যত্ন দিয়ে রক্ষা করতে হবে। বাঘ হত্যা নয় বাঘকে বাঁচিয়ে রাখতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করে অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য চাই জনসচেতনতা। একই সঙ্গে সুন্দরবনের জলদস্যুদের বিতাড়ন করতে আরো কঠোর হতে হবে। বনকে জলদস্যুমুক্ত এবং বন্যপ্রাণি ও বনজীবীদের অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে তোলাটাই এখন জরুরি।
‘বাঘ বাঁচলে বাঁচবে বন, রক্ষা হবে সুন্দরবন’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জে এসব আহ্বান জানিয়ে আজ বুধবার পালিত হলো বিশ্ব বাঘ দিবস। সকালে এ উপলক্ষে এক র্যালি বের করা হয়।
পরে স্থানীয় সুশীলন টাইগার পয়েন্টে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন শ্যামনগর উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহসিন উল মুলক, বিজিবির ৩৪ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খালিদ বিন ইউসুফ, সহকারী বন সংরক্ষক এস এম শোয়াইব খান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নূরজাহান পারভিন ঝরনা, মুন্সিগঞ্জ ও বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল কাসেম ও নজরুল ইসলাম, সাবেক চেয়ারম্যান অসীম জোয়ার্দার, ওয়াইল্ড লাইফের রুবাইদ হোসেন, সাজেদুল ইসলাম প্রমুখ।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, সাতক্ষীরার বন এলাকায় দীর্ঘদিন বাঘের গর্জন শোনা যাচ্ছে না। এমনকি চলতি প্রজনন মৌসুমেও বাঘের আনাগোনা লক্ষ করা যাচ্ছে না। বাঘের সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। সুন্দরবনের গোলাখালি ব্যাঘ্র পয়েন্ট ও বনবিবিতলায় বাঘের আনাগোনা এত বেশি ছিল যে সাধারণ জেলে, বাওয়ালি ও মৌয়ালরা সব সময় আতঙ্কের মধ্যে থাকতেন। গত বছরও গোলাখালির ব্যাঘ্র পয়েন্টের নির্দিষ্ট স্থানে বাঘ ও বাঘিনীর প্রজনন ক্রিয়ার চিহ্ণ মিলেছে। এ সময় সেখানকার ফসল ক্ষেতে তাদের আনাগোনা লক্ষ করা গেলেও এ বছর তা দৃশ্যমান হয়নি। এমনকি বাঘিনীকে প্রজননে সাড়া দিতে বাঘের সেই গর্জনও এলাকার অধিবাসীরা এবার শুনতে পায়নি। প্রতিবছর বাঘের হামলার শিকার হলেও গত দুই তিন বছরে সাতক্ষীরা অঞ্চলের কোনো জেলে, বাওয়ালি ও মৌয়াল বাঘের মুখে পড়েনি।
এসব তথ্য তুলে ধরে আয়োজকরা আরো বলেন, সুন্দরবন থেকে বাঘের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে যা উদ্বেগজনক। প্রতিবছর সুন্দরবন সংলগ্ন লোকালয়ে বাঘের হামলার ঘটনা ঘটত। এ সময় পিটুনিতে বাঘের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটেছে উল্লেখ করে তাঁরা বলেন, কয়েক বছর ধরে এ দৃশ্য আর সামনে আসছে না। এতে বোঝা যায় বাঘের সংখ্যা কমে গেছে।
সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে অন্তত দশটি সশস্ত্র জলদস্যুবাহিনী আছে মন্তব্য করে আলোচনা সভায় বলা হয়, এসব দস্যুরা বাঘ ও হরিণ হত্যা করে মাংস ও চামড়া বিক্রি করে থাকে।
সাতক্ষীরায় কয়েক দফায় অনেক বাঘ-হরিণের চামড়া আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাঘের সংখ্যা কেন কমে যাচ্ছে তার সুনির্দিষ্ট কারণ চিহ্ণিত করে এবং কী করলে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে সে ব্যাপারে আরো বেশি ভূমিকা রাখা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তাঁরা।
২০১০ সালে সালে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ৪০০ থেকে ৪৫০। আর চলতি বছরের সরকার পরিচালিত জরিপে তা নেমে এসেছে ১১০-এ। এমন তথ্য দিয়ে তাঁরা বলেন, সিডর ও আইলার পর এমন কোনো বড় দুর্যোগ আঘাত হানেনি যাতে বাঘসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীর জীবনহানি হতে পারে। প্রতিকূল পরিবেশ ছাড়াও বাঘের জন্য মিষ্টি পানির সংকট, বনে খাবারের অভাব এবং চোরাশিকারিদের কারণে বাঘের সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে বলে আলোচনা সভায় উল্লেখ করা হয়।
এ ছাড়া ব্যাঘ্র সম্পদ হ্রাসের নেপথ্যে সুন্দরবনকে বাঘের অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে তোলারও ব্যর্থতা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।