মনপুরার নিখোঁজ জেলে পরিবারে শোকের মাতম
ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেনের’ আঘাতে ভোলার মনপুরা উপজেলার মাছ ধরার ট্রলার ডুবির ঘটনায় নিখোঁজ জেলেদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে পাঁচজনকে।
ট্রলার মালিক ও জেলেদের দাবি, এখনো পর্যন্ত ৫৬ মাঝি-মাল্লা নিখোঁজ রয়েছেন। যদিও উপজেলা প্রশাসন বলছে, তাদের কাছে নিখোঁজ ৪২ জেলের একটি তালিকা রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেনের’ আঘাতে উপজেলার উত্তর সাকুচিয়া এবং দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের সালাম মাঝি, নীরব মাঝি ও সালাউদ্দিন মাঝির ট্রলার ডুবে যায়।
ফিরে আসা নীরব মাঝির ট্রলারের জেলে মো. শাহাবুদ্দিন মাঝি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সাগরের পানি যখন ফুসে পাহাড়ের মতো আকার ধারণ করছে, তখন বুঝতে পারি বিপদসংকেত শুরু হয়েছে। তখন জাল কেটে দিয়ে ট্রলার নিয়েই কূলের দিকে রওনা দিই।’urgentPhoto
শাহাবুদ্দিন মাঝি আরো বলেন, ‘ঘণ্টা দুয়েক চালার পর ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে ট্রলারের তলা ফেটে যায়। পানি উঠতে শুরু করলে আমি একটি বয়া নিয়ে আর সবাই ফ্লুট নিয়ে সাগরের পানিতে ভাসতে থাকি। দুদিন ভাসার পর ট্রলারের সবাই পানিতে ডুবে যায়। তার মধ্যে মো. রফিকের লাশ পাওয়া যায়। আমাকে উদ্ধার করে হাতিয়ার একটি মাছ ধরার ট্রলার।’
ছয়দিন সাগরে ভেসে থাকার পর ফিরে এসেছেন সালাম মাঝির ট্রলারে থাকা দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের সাকুচিয়া গ্রামের মো. শাহিন ও মো. ফিরোজ মাঝি। তাঁরা জানান, সাগরের পানি উত্তাল হয়ে উঠলে দ্রুত জাল কেটে কূলের দিকে রওনা দেন। মাঝপথেই ২২ জন জেলে নিয়ে ট্রলারটি ডুবে যায়।
সবাই একসঙ্গে তিন থেকে সাড়ে ৩০০ ফ্লুট নিয়ে ভাসতে থাকে সাগরে। দুদিন পর এক একজন করে পানিতে তলিয়ে যেতে থাকে। একে একে ১৮ জন এভাবে তলিয়ে যায়। ভাসমান অবস্থায় মাছ কামড় দিয়ে শরীরের মাংস নিয়ে যায়। কিছুই করার ছিল না। শরীরে শক্তি না থাকায় ফ্লুটের সঙ্গে শরীর ও হাত শক্ত করে বেঁধে রাখেন জীবিত মাঝিরা।
ছয়দিন পর সন্দ্বীপের একটি মাছ ধরার ট্রলার মো. শাহিন, মো. ফিরোজ, মো. সিরাজ ও মো. জসিম এ চারকে উদ্ধার করে। পরে সবাইকে ভোলার মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয় বলে জানান ফিরে আসা ট্রলারের জেলেরা।
মনপুরা উপজেলার দুর্গম উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের বাতানখালী গ্রামের দুই সহোদর মো. কবির হোসেন ও আবদুল হাদী নিখোঁজ রয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার তাদের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের সদস্যরা ঘোর দুশ্চিন্তা নিয়ে সময় পার করছেন। তাদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম।
আবদুল হাদীর সঙ্গে বছর দেড়েক আগে বিয়ে হওয়া নাজমা খাতুনের। তাদের ঘরে দেড় মাসের শিশু সন্তান আল-আমিন রয়েছে। নাজমা খাতুন এনটিভি অনলাইনকে জানান, তাঁর আপন বলতে কেউ নেই। এই সন্তান নিয়ে এখন তিনি কোথায় যাবেন, কীভাবে সন্তানকে মানুষ করবেন সেই চিন্তায় অস্থির নাজমা।
একই অবস্থা মো. কবির হোসেনের স্ত্রী সুরমা বেগমেরও। একই গ্রামের মো. সিরাজ উদ্দিনও নিখোঁজ রয়েছেন। সিরাজের মা নূরজাহান বেগম (৫৫) এনটিভি অনলাইনকে বলেন, সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলো সিরাজ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিখোঁজদের অনেকেরই বাড়ি দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের সাকুচিয়া, আনন্দ বাজার, জনতা বাজার, মাস্টারের হাটসহ বিভিন্ন গ্রামে।
মনপুরার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এরশাদ হোসেন খান এনটিভি অনলাইনকে জানান, তাদের কাছে ৪২ নিখোঁজ জেলের একটি তালিকা রয়েছে। এ ছাড়া একজনের লাশ পাওয়া গেছে আর বাকি চারজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। সাহায্য পেলেই আহত, নিখোঁজ আর নিহত পরিবারকে কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।